বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৬

আমিত নই কবি
        -মোঃ রেজাউল আলম (রেজা)
Rezaul Alam

আমিত নই কবি,
কবি সেত নজরুল-রবি।
ছন্দের সাথে আছি আমি,
মাতৃ ভাষায় ছন্দ মিলাই।
আমিত নই কবি,
কবিতার স্রষ্টা নজরুল-রবি।।

আমিত মিল করে লিখি ছন্দে,
আছি সবার মাঝে আনন্দে।
বিধাতার রয়েছে দয়া,
সবার আশীর্বাদের ছোঁয়া।
আমিত নই কবি,
কবি সেত নজরুল-রবি।
ছন্দের সাথে আছি আমি,
মাতৃ ভাষায় ছন্দ মিলাই।
আমিত নই কবি,
কবিতার স্রষ্টা নজরুল-রবি।।

গ্রুপগুরুর রয়েছে নির্দেশনা,
আমার ছন্দ ও প্রবন্ধের প্রেরণা।
লিখতে আমি পারি না যদি বলেন কবি,
বলছেন আবার রাগ কইরেন না লিখেন সবই।
আমিত নই কবি,
কবি সেত নজরুল-রবি।
ছন্দের সাথে আছি আমি,
মাতৃ ভাষায় ছন্দ মিলাই।
আমিত নই কবি,
কবিতার স্রষ্টা নজরুল-রবি।।

বলেন যদি কবি তাহলে পাবো শরম
উল্টো পথের যাত্রি আমি লজ্জ্বায় হই গরম।
সবার দোয়ায় শুরু করেছি নজরুল-রবিকে অনুসরন পর্ব,
কবিতায় তারাই লিখেছেন সকল মর্ম, নজরুল-রবি আমার গর্ব।
আমিত নই কবি,
কবি সেত নজরুল-রবি।
ছন্দের সাথে আছি আমি,
আমিত নই কবি,
কবিতার স্রষ্টা নজরুল-রবি।।
মাতৃ ভাষায় ছন্দ মিলাই।

ঢাকা, বাংলাদেশ
৩১ আগস্ট, ২০১৬ ।

সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৬

প্রকট ও প্রচ্ছন্ন
- মোঃ রেজাউল আলম (রেজা)
দুরন্তপনা মনে নিয়ে উড়ছি দেখ ঐ বাতাসে,
যেখানে তুমি কি আছো না নেই সকাসে-...
হিমেল হাওয়া,
ভিজা দুর্বাঘাসে পাওয়া,
একটু বসে ভাবি কিছু বলব তোমায় আড়ালে,
সেখানে তুমি কি আছো না নেই মোর অন্তরালে।

ভালোবাসার প্রকাশ তোমার অধরে পেয়েছিলাম,
নিশ্বাসে নিমগ্ন হয়ে রবীন্দ্রসংগীত গেয়েছিলাম-
জানালায় চাঁদ,
জ্যোৎস্না রাত,
মন্ত্রমুগ্ধ হৃদয়ে তোমাকে অনুভবে প্রকটভাবে পেলাম,
সেখানে তুমি কি ছিলে না নেই সবই প্রচ্ছন্নতার প্রলাম।
হৃদয়ে তোমাকে হারানোর ভয় তবুও মন নীরব রয়,
তোমার মন নিংড়ানো স্মৃতিতে মন্দির-মাজার হয়-
কাতর মন,
খোজে সারাক্ষণ,
প্রচ্ছন্নতার আবেশে কেন হারানোর বেদনা বুকে জাগে,
প্রকট হয়ে এসো কাছে, তুমি কি ছিলে না তুমি থাকবে।
স্থান- কর্মসংস্থান ব্যাংক ভবন, রাজউক এভিনিউ, ঢাকা-১০০০,
২৩ আগস্ট, ২০১৬।
 
আমার যাবার সময় হল দাও বিদায়
                           - কাজী নজরুল ইসলাম
আমার যাবার সময় হল দাও বিদায়
মোছ আঁখি দুয়ার খোল দাও বিদায়।।
ফোটে যে ফুল আঁধার রাতে...
ঝরে ধুলায় ভোর বেলাতে।।
আমায় তারা ডাকে সাথী
আয়রে আয়
সজল করুন আঁখি তোলো দাও বিদায়
অন্ধকারে এসেছিলাম
থাকতে আঁধার যাই চলে
ক্ষনেক ভালবেসেছিলে চিরকালের নাই হলে
হল চেনা হল দেখা
নয়ন জলে রইল লেখা
দর বিরহী ডাকে কেকা বরষায়
ফাগুন স্বপন ভোলো ভোলো দাও বিদায়।।


-------------------------জবাব--------------------------


বিদায় নাহি দেব প্রিয় নজরুল তোমায়
                                   - মোঃ রেজাউল আলম (রেজা) (Rezaul Alam)
বিদায় দিতে মন নাহি চায় বিদায় বেলায়,
ধুমকেতুর মত তোমার প্রকাশ, শুরু তোমার অগ্নিবীণায়।
নজরুলকে আমি বলেছি কবি কয় রবি বিশ্বকবি,
বিদায় নাহি দেব মোরা তুমিই যে মোদের শ্রেষ্ঠ জাতীয় কবি।

বিদায় নাহি দেব প্রিয় নজরুল তোমায়,
মনের চেতনায় রাখবো আগলায়।।

যাবার সময় হলেই গুরু যেতে নেই
তোমার র্কীর্তিতে রবে সকল দুয়ার খোলা এ ধরনীতেই
যে ফুল ফোটে দিনে রাতে
ঝরেণা অনেক ফুল দশ মাসেতে
তেমনি ফুল তুমি নজরুল
চলে গেলে মোরা হব ব্যাকুল।

বিদায় নাহি দেব নজরুল তোমায়,
মনের চেতনায় রাখবো আগলায়।।
-----------------------------
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম-এর প্রতি অতল শ্রদ্ধা...
@@নজরুল স্মরণে: নজরুল চেতনায়@@

কারার ঐ লৌহকপাট,
ভেঙ্গে ফেল, কর রে লোপাট,
রক্ত-জমাট
শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।
ওরে ও তরুণ ঈশান!
বাজা তোর প্রলয় বিষাণ!
ধ্বংস নিশান
উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি।
.....-কাজী নজরুল ইসলাম
 
জাতীরজনক বঙ্গবনধু শেখ মুজিবর রহমান প্রিয়কবি নজরুলকে
স্বপরিবারে দেশে ফিরিয়ে আনেন
প্রিয় বাংলাদেশের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতীরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-ই চিনতেন বাংলার দুই নক্ষত্রকে। তাইত তিনিই রবীন্দ্রনাথকে বসিয়েছিলেন হৃদয়ের মনিকোঠায় আর নজরুলকে চেতনায় এবং দিয়েছিলেন তাদের যোগ্য সম্মান। রবীন্দ্র রচণাকে করেছিলেন জাতীয় সংগীত এবং নজরুলের রচণাকে করেছিলেন রণসংগীত। পাশাপাশি কাজী নজরুল ইসলামকে বঙ্গবন্ধু করেছিলেন জাতীয় কবি ও ফিরিয়ে এনেছিলেন তাকে প্রিয় বাংলাদেশে।
কাজী নজরুল ইসলাম রয়েছেন মোদের চেতনায়। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে প্রেম-ভালোবাসা, সাম্য ও বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে–কাজেই "বিদ্রোহী কবি", তাঁর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে প্রতি বৎসর উদযাপিত হয়ে থাকে। কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam, মে ২৪, ১৮৯৯–আগস্ট ২৯, ১৯৭৬; জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬–ভাদ্র ১২, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) ছিলেন দুইবাংলার জনপ্রিয় বিদ্রোহী ও সাম্যের কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ – দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী ও স্যাম্যের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী ও সাম্যের কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই সমালোকদের সামনেই তাকে কবি হিসেবে স্বীকৃত দেন এবং বলেন- “নজরুলকে আমি কবি বলেছি। তার পান্ডুলিপির মর্মবাণী যারা না বুঝেই তার সম্পর্কে মন্তব্য করছেন, তাদেরকে নজরুলের লেখা মনোযোগে পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি।”
 
নজরুল আমার চেতনায় রয়েছেন। মহাপ্রয়ান দিবসে নজরুল স্মরণে অতল শ্রদ্ধা জানাই। নজরুল একটি নাম একটি ভালোবাসা একরাশ শ্রদ্ধা-
-> ভোরের কবি নজরুল: ভোরের পাখির ডাকে যেমন শিশুর তার মাকে ঘুম থেকে জেগে তোলার স্বাদ জাগে। তেমনি স্বাদ নজরুলের ডাকেই প্রস্ফুটিত হয়, তাই তিনিই ভোরের কবি। কবি বলেন-

“আমি হব সকাল বেলার পাখি
সবার আগে কুসুম-বাগে উঠব আমি ডাকি।
সূয্যিমামা জাগার আগে উঠব আমি জেগে,
‘হয়নি সকাল, ঘুমো এখন’- মা বলবেন রেগে।”
 
->শিশুদের প্রিয় কবি নজরুল: তাঁর শিশুতোষ কবিতা বাংলা কবিতায় এনেছে নান্দনিকতা খুকি ও কাঠবিড়ালী, লিচু-চোর, খাঁদু-দাদু ইত্যাদি তারই প্রমান। শিশুদের প্রিয় কবি খুকি ও কাঠবেড়ালিকে নিয়ে বলেন-

“কাঠবেড়ালি! কাঠবেড়ালি! পেয়ারা তুমি খাও?
গুড়-মুড়ি খাও? দুধ-ভাত খাও? বাতাবি-নেবু? লাউ?
বেড়াল-বাচ্চা? কুকুর-ছানা? তাও-
ডাইনি তুমি হোঁৎকা পেটুক,
খাও একা পাও যেথায় যেটুক!”
 
-> সাম্য, বিদ্রোহী ও দ্রোহের কবি নজরুল: কবি নজরুল তার কবিতায় সাম্যের গান গেয়েছেন, করেছেন বিদ্রোহ কিংবা দ্রোহের গান গেয়েছেন। লিখেছেন অগ্নিবীণা-১৯২২, সঞ্চিতা-১৯২৫, ফনীমনসা-১৯২৭, চক্রবাক-১৯২৯, সাতভাই চম্পা- ১৯৩৩, নির্ঝর- ১৯৩৯, নতুন চাঁদ- ১৯৩৯, মরুভাস্কর-সঞ্চয়ন-নজরুল ইসলাম: ইসলামী কবিতা-১৯৮২ ছাড়াও আরও অনেক কবিতা।
(১) বিদ্রোহী কবিতায় কবি খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া বলেন-
“বল বীর-
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারী' আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রীর!
বল বীর-
বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি'
চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ছাড়ি'
ভূলোক দ্যূলোক গোলোক ভেদিয়া
খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া,
উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!”
 
(২) নজরুলের সাম্যবাদের প্রধান ক্ষেত্র মানুষ। কে কুলি-মজুর আর কে সাহেব? সবাই তার দৃষ্টিতে সমান। 'সাম্যবাদী' কাব্যগ্রন্থে মোট ১১টি কবিতা স্থান পেয়েছে, যেমন- 'সাম্যবাদী', 'নারী', 'মানুষ', 'বারাঙ্গনা', 'রাজা-প্রজা', 'ঈশ্বর', 'পাপ', কুলি-মজুর', 'চোর-ডাকাত', 'সাম্য' ও 'কান্ডারি হুঁশিয়ার'। তিনি মন্দির-কাবার চেয়ে মানুষের হৃদয়কে বড় জ্ঞান করেছেন। কবি বলেছেন-'এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই।' তাই গেয়েছেন সাম্যের গান-
“গাহি সাম্যের গান-
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান
যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান।
গাহি সাম্যের গান!
কে তুমি?-পার্সী? জৈন? ইহুদী? সাঁওতাল, ভীল, গারো?
কনফুসিয়াস? চার্বাক-চেলা? বলে যাও, বল আরো!
বন্ধু যা খুশি হও”
(৩) দ্রোহের কবি যৌবনের কবি প্রাণের কবি নজরুল বলেছিলেন –
“মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দ্যম
মোরা ঝর্ণার মত চঞ্চল,
মোরা বিধাতার মত নির্ভয়
মোরা প্রকৃতির মত স্বচ্ছল।।
কিংবা - ২
গাজনের বাজনা বাজা!
কে মালিক? কে সে রাজা?
কে দেয় সাজা
মুক্ত স্বাধীন সত্যকে রে?
হা হা হা পায় যে হাসি,
ভগবান পরবে ফাঁসি!”
 
-> প্রেম ও ভলোবাসার কবি নজরুল: প্রেমের কবি ভালোবাসার কবি নজরুল হৃদয়ে প্রেম ও ভালোবাসার বান জাগিয়ে ছিলেন। প্রিয়ার খোপায় ফুল দিতে কে না চায় কিন্তু খোপায় তারার ফুল দিয়ে কন্ঠে বালিকা, জোছনার সাথে চন্দন দিয়ে প্রিয়ার গায় মাখাতে চাওয়া, আহা কি প্রেম কি ভালোবাসা গো। কবির ভাষায়-
“মোর প্রিয়া হবে এসো রানী দেব খোঁপায় তারার ফুল
কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির চৈতী চাঁদের দুল।।
কণ্ঠে তোমার পরাবো বালিকা
হংস –সারির দুলানো মালিকা
বিজলী জরীণ ফিতায় বাঁধিব মেঘ রঙ এলো চুল।।”
-> কবি নজরুলের নজরুলগীতি: নজরুলগীতি রবীন্দ্রসংগীতের জয়গানের পাশাপাশি একটি স্বতন্ত্র মাত্রা এনে দিয়েছিল। নজরুলের গাওয়া সংগীত মনকে বিদ্রোহী করে, প্রেমিক করে কিংবা দিনের শুরুতে ভোরের ডাক দেয়, হৃদয়ে ভালোবাসার ডাক দেয় ও চেতনা জাগায়। নজরুলগীতির মধ্যে অন্যতম হলো- বুলবুল-১৯২৮, সন্ধ্যা-১৯২৯, চোখের চাতক-১৯২৯, নজরুল গীতিকা-১৯৩০, নজরুল স্বরলিপি (স্বরলিপি)-১৯৩১, চন্দ্রবিন্দু-১৯৩১, সুরসাকী-১৯৩২, বনগীতি- ১৯৩১, জুলফিকার-১৯৩১, গুল বাগিচা-১৯৩৩, গীতি শতদল-১৯৩৪, সুর মুকুর-১৯৩৪, গানের মালা-১৯৩৪, স্বরলিপি-১৯৪৯, বুলবুল দ্বিতীয় ভাগ-১৯৫২, রাঙ্গা জবা (শ্যামা সংগীত)-১৯৬৬। নজরুল কহেন-
“আমার গানের মালা
আমি করব কারে দান।
মালার ফুলে জড়িয়ে আছে
করুণ অভিমান।
মালা করব কারে দান।।”

-> ছোট গল্পকার নজরুল: কবি নজরুলের বিখ্যাত ছোটগল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ব্যথার দান-১৯২২, রিক্তের বেদন-১৯২৫, শিউলি মালা- ১৯৩১ অন্যতম। কবি নজরুলের ছোটগল্পের শুদ্ধতা হৃদয়ে প্রেম ও ভালোবাসা জাগায়।
 
-> উপন্যাসিক নজরুল: নজরুল উপন্যাসিক হিসেবে বিখ্যাত ছিলেন। তার সৃষ্ট উপন্যাসগুলো পরবর্তীতে বিখ্যাত নাটক হিসেবেও সমাজে স্বীকৃতি ও জনপ্রিয়তা পায়। তার উল্লেখ্যযোগ্য উপন্যাস হলো: বাঁধন হারা-১৯২৭, মৃত্যুক্ষুধা-১৯৩০, কুহেলিকা-১৯৩১। পরবর্তীতে মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাস থেকে বিখ্যাত নাট্যকারগণ নাটক মঞ্চস্থ করেছিলেন এবং টিভিতে ধারাবাহিক নাটকও প্রচার করা হয়েছিল যা বিখ্যাত ও জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
 
-> নাট্যকার নজরুল: নাট্যকার কবি নজরুল ছিলেন অকুতভয় ও স্বপ্নিল। বাস্তবতাকে তিনি নাট্যরূপ দিয়েছিলেন বহুবার। তার বিখ্যাত নাটকগুলোর মধ্যে ঝিলিমিলি-১৯৩০, আলেয়া (গীতিনাট্য)-১৯৩১, পুতুলের বিয়ে (কিশোর নাটক)-১৯৩৩, মধুমালা (গীতিনাট্য)-১৯৬০, ঝড় (কিশোর কাব্য-নাটক)-১৯৬০, পিলে পটকা পুতুলের বিয়ে (কিশোর কাব্য-নাটক)-১৯৬৪ হলো অন্যতম।
 
-> প্রবন্ধ এবং নিবন্ধকার নজরুল: বিখ্যাত প্রবন্ধকার হিসেবে কবি নজরুল সমাধৃত ছিলেন। তার লিখিত প্রবন্ধ ও নিবন্ধগুলোর মধ্যে যুগবানী-১৯২৬, ঝিঙ্গে ফুল-১৯২৬, দুর্দিনের যাত্রী-১৯২৬, রুদ্র মঙ্গল-১৯২৭ কিংবা ধুমকেতু-১৯৬১, রাজবন্দীর জবানবন্দী-১৯২৩, দিওয়ানে হাফিজ(অনুবাদ)-১৯৩০, কাব্যে আমপারা (অনুবাদ) ১৯৩৩, মক্তব সাহিত্য (মক্তবের পাঠ্যবই-১৯৩৫, রুবাইয়াতে ওমর খৈয়াম (অনুবাদ-১৯৫৮,নজরুল রচনাবলী (ভলিউম ১-৪,বাংলা একাডেমী-১৯৯৩ হলো অন্যতম। ধুমকেতু তার বিখ্যাত প্রবন্ধ ছিল।
 
মর্মকথা: নজরুলের কাব্যগ্রন্থ বাংলা কবিতা ও বাংলা সাহিত্যে একটি নতুনত্ব সৃষ্টিতে সমর্থ হয়, এর মাধ্যমেই বাংলা কাব্যে ও বাংলা সাহিত্য জগতে পালাবদল ঘটে। উপন্যাসগুলোর মধ্যে মৃত্যুক্ষুধা এবং প্রবন্ধগুলোর মধ্যে ধুমকেতু কবির অনবদ্য সৃষ্টি। বিদ্রোহী কবিতার জন্য নজরুল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার রচিত আরেকটি বিখ্যাত কবিতা হচ্ছে কামাল পাশা। নজরুলের সবচেয়ে সাড়া জাগানো কবিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে: “প্রলয়োল্লাস, আগমনী, খেয়াপারের তরণী, শাত-ইল্-আরব, বিদ্রোহী, কামাল পাশা” ইত্যাদি। এগুলো বাংলা কবিতার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।
 
দুই নক্ষত্রের কথা: শেষ হইয়াও হইল না শেষ। শুরুতে দুই নক্ষত্রের কথা বলে ছিলেম। এবার শেষেও একটু না বললেই নয়। রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ’। বলেন, মানবিক ধর্মের কথা যা প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের উর্ধ্বে। একইভাবে নজরুল বলেন, ‘আমি আজও মানুষের প্রতি আস্থা হারাইনি। মানুষকে আমি শ্রদ্ধা করি, ভালবাসি। শ্রষ্ঠাকে আমি দেখিনি কিন্তু মানুষকে আমি দেখেছি। এই ধূলিমাখা, অসহায়, দুঃখী মানুষই একদিন বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করবে।’

নজরুল লিখেন,
‘গাহি সাম্যের গান/ মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।’
সেই চিরায়ত উপলব্ধি-‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।’
 
নজরুলের গুরুভক্তি: কাজী নজরুল ইসলাম গুরু বলে মান্য করতেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। একদা নজরুল নিজের কাব্য চর্চা থেকে অন্যত্র মনোনিবেশ করায় রবীন্দ্রনাথ কাজী নজরুলকে বলেছিলেন, ‘তুমি নাকি এখন তলোয়ার দিয়ে দাড়ি চাছো?’ নজরুল উত্তরে লিখেছিলেন, ‘গুরু কন আমি নাকি তলোয়ার দিয়ে দাড়ি চাছি...।’ রবীন্দ্রনাথের বয়স আশি বছর পূর্তি হয় ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে। তখন কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে লিখেন, ‘অশ্রুপুষ্পাঞ্জলি’। ১৯২০ থেকে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণের পূর্বকাল পর্যন্ত রবীন্দ্র-নজরুল সম্পর্ক ছিল পারস্পরিক স্নেহ ও শ্রদ্ধার।
তাদের সম্পর্ক ছিল শ্রদ্ধা ও স্নেহের গুরু-শিষ্য। ১৯২২ সালের ১১ আগষ্ট কলকাতা থেকে নজরুলের পরিচালনায় প্রকাশিত হয় অর্ধ-সাপ্তাহিক 'ধুমকেতু'। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ধুমকেতুর আর্শীবাণীতে নজরুলকে স্নেহধন্য "কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু” উল্লেখ করে লিখেন:
“আয় চলে আয়, রে ধুমকেতু
আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু
দুর্দিনের এই দুর্গশিরে
উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন”
১৯২৩ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার 'বসন্ত' গীতিনাট্য নজরুলকে উৎসর্গ করে দেশবাসীর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। রবীন্দ্রনাথের 'বসন্ত' উৎসর্গের পর, নজরুল আলীপুর সেন্ট্রাল জেলে বসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধাভরে "বিশ্বকবি সম্রাট শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্রী শ্রীচরণারবিন্দেষু" সম্মোধন করে রচনা করেন -'আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে' অর্থাৎ 'প্রলয়োল্লাস' কবিতা। কবি বলেন-
“আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে–
মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে।
নজরুল স্মরণে নজরুল আমার চেতনায়:
রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর এক বছর পরেই নজরুল চিরতরে অসুস্থ এবং ক্রমান্বয়ে সম্বিতহারা ও নির্বাক হয়ে যান। বাংলার দুই মহান কবির কণ্ঠ প্রায় একই সময়ে নীরব হয়ে যায়। কিন্তু আসলে কি নীরব হন নাকি রবীন্দ্রনাথ রয়েছেন হৃদয়ে ও নজরুল রয়েছেন চেতনায়।
রবীন্দ্রনাথের ভাষায় –
“তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম”

নজরুলের ভাষায়-
“আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো
তবু আমারে দেবোনা ভুলিতে।”
আমার ভাষায়-
নজরুল আমার চেতনায়
                              -মোঃ রেজাউল আলম (রেজা)
নজরুল আমার চেতনায় থাকবে স্বরবে,
তোমার কবিতা ও গানে আমার লীলা হবে।
যৌবনে তোমার প্রেমের কবিতা ব্যাকুল করে আমায়,
সবসময়ই তোমার গান আমার চেতনা জাগায়।।





 
রবীন্দ্রনাথ থাকবে আমার হৃদয় জুড়ে,
ধুমকেতুর মত আসবে নজরুল বারে বারে ফিরে।
মৃত্যু দিবসে নজরুলকে করছি স্বশ্রদ্ধ স্মরণ,
দুই বাংলা ১২ ভাদ্রে করছে অতল শ্রদ্ধায় কবিকে বরণ।
 
সাম্যের কবি, বিদ্রোহী কবি তুমি নজরুল,
জাতীয় কবি তোমাকে চিনতে করিনি ভুল।
মহাপ্রয়াণ বার্ষীকিতে তোমার বজ্রকন্ঠের বিদ্রোহে,
তুমি চিরতরে দুরে গিয়েও রয়েছ বাংলায় তোমার কীর্তিতে।
 
নজরুল আমার চেতনায় থাকবে স্বরবে,
তোমার কবিতা ও গানে আমার লীলা হবে।
যৌবনে তোমার প্রেমের কবিতা ব্যাকুল করে আমায়,
সবসময়ই তোমার গান আমার চেতনা জাগায়।।
 
-মোঃ রেজাউল আলম (ইরান) Rezaul Alam
জীবন যেখানে দুইরকম
                        -মোঃ রেজাউল আলম (রেজা)

জীবন যেখানে দুইরকম, সেখানে দুঃখ-কষ্ট কিংবা সুখ-দু:খের ঘটে প্রকাশ,
জীবনের প্রথমভাগ শিশু-কৈশোর এবং দ্বিতীয়ভাগ যৌবন-বার্ধক্যের আশ।
প্রস্ফুটিত চারা গাছ বীজ থেকে বের হয়ে বড় হয়,
যৌবনের দীপ্তিময়তায় ফল দেয় অথবা ফুল দেয়।
কিছুগাছ যৌবনেই পরে ঝড়ে,
কিছু যুগযুগে মাটি থাকে আঁকড়ে।
জীবন যেখানে দুইরকম ভাবে চমকায়
সেখানে জীবন প্রকাশ পায় - মলিনতায় কিংবা উজ্জ্বলতায়।।


শিশুকালের এই আমি, কৈশরেতে ছিলেম সেই আমি,
যৌবনেতে তোমায় নিয়ে ঘর-সংসার, বার্ধক্যে রইবে কি সেই সংসারের সেই তুমি।
শিশু-কৈশরকাল তোমাবিহীন ছিলেম শান্ত,
যৌবনে তোমায় পেয়ে হইলেম অশান্ত।
কিছুকাল উত্তাপহীন জীবন,
কিছুকাল কর্মময় জীবন,
জীবন যেখানে দুইরকম ভাবে চমকায়,
সেখানে জীবন প্রকাশ পায় - মলিনতায় কিংবা উজ্জ্বলতায়।।

তুমি ছাড়া জীবন ও তুমিসহ জীবন, ‍জীবনের দুইরকম সময় কাটল আনমনায়,
সখিগো তুমি হীনা অবেলা, সখিগো তোমার কাছে রয়েছি যে এবেলায়।
ঘরে ও বাইরে তোমাকে পেলে সুখের ভেলা মিলে,
যখন তুমি ছিলেনা মোর সনে সুখ কি ছিল ভেবেছি নির্জনে।
বাড়ির আঙ্গিনায় তোমার ভালোবাসার পদ চিহ্ন,
তোমাতে আমার নীল কষ্টগুলো করি বিদৃর্ণ।
জীবন যেখানে দুইরকম ভাবে চমকায়,
সেখানে জীবন প্রকাশ পায় - মলিনতায় কিংবা উজ্জ্বলতায়।।


স্থান: মতিঝিল, ঢাকা, ২৪ আগস্ট, ২০১৬।