বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৬

অপার বাউল ফকির লালন সাইয়ের ১২৬-তম তিরোধান দিবসে অতল শ্রদ্ধা

"লালন ফকির নামে একজন বাউল সাধক হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, জৈন ধর্মের সমন্বয় করে কী যেন একটা বলতে চেয়েছেন - আমাদের সবারই সেদিকে মনোযোগ দেওয়া উচিৎ।" -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

“সব লোকে কয়, লালন ফকির হিন্দু কি যবন।
লালন বলে, আমার আমি না জানি সন্ধান।".....

“সব লোকে কয়
লালন কি জাত সংসারে।
লালন বলে জাতের কি রূপ
দেখলাম না তা-নজরে।।"
 
তার কোন জাত নেই, ধর্ম নেই, তিনি হলেন মানুষ। তিনি সত্যিই অতুলনীয়, তাঁর যা সৃষ্টিকর্ম রয়েছে, তাতে তার অনেক বড় সম্মান পাওনা, কিন্তু দুর্ভাগ্য বা সৌভাগ্য যাই হোক তিনি তা পাননি। এই মরমী সাধকের রয়েছে অজস্র অমূল্য সৃষ্টি। তার সঙ্গে কাউকে তুলনা করা চলেনা। তার তুলনা শুধু তিনি নিজেই। কিন্তু যা সবসময় হয় আমাদের দেশে, গুণীজন পায়না যোগ্য সম্মান, মর্যাদা। অবশ্য তিনি এসবের অনেক উর্ধ্বে ছিলেন। তিনি এ ধরণের সম্মান বা মর্যাদার কাঙ্গালী ছিলেন না। তিনি স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিলেন। তাইতো তিনি গেয়েছেন-

'আমি অপার হয়ে বসে আছি
ও হে দয়াময়,
পারে লয়ে যাও আমায়।।
আমি একা রইলাম ঘাটে
ভানু সে বসিল পাটে-
(আমি) তোমা বিনে ঘোর সংকটে
না দেখি উপায়।।
নাই আমার ভজন-সাধন
চিরদিন কুপথে গমন-
নাম শুনেছি পতিত-পাবন
তাইতে দিই দোহাই।।
অগতির না দিলে গতি
ঐ নামে রবে অখ্যাতি-
লালন কয়, অকুলের পতি
কে বলবে তোমায়।।'
 
সেই অপার বাউল ফকির লালন সাইয়ের তিরোধান দিবসে (আজ) অতল শ্রদ্ধা জানাই....
 
সোনার মানুষ ভাসছে রসে
যে জেনেছে রসপন্থি সে
দেখিতে পায় অনায়াসে।।
তিনশো ষাট রসের নদী
বেগে ধায় ব্রহ্মাণ্ড ভেধী।
তার মাঝে রূপ নিরবধি
ঝলক দিচ্ছে এই মানুষে।।
মাতা পিতার নাই ঠিকানা
অচিন দেশে বসত খানা।
আজগুবি তার আওনা যাওনা
কারণবারির যোগ বিশেষে।।
অমাবস্যায় চন্দ্র উদয়
দেখতে যার বাসনা হৃদয়।
লালন বলে থেকো সদাই
ত্রিবেনীর ঘাটে বসে।।

♥ রবীন্দ্রনাথের শারদ প্রাতে, শরতের মহিমায় বিস্মৃতি জাগানিয়া ♥

রবীন্দ্রনাথের শারদ প্রাতে, শরতের মহিমায় বিস্মৃতি জাগানিয়া
"রবিবারে রবির সাথে" পর্ব-২ এবার আমার ভাবনা "রবীন্দ্রনাথের শারদ প্রাতে শরতের মহিমায় বিস্মৃতি জাগানিয়া"। শরতের বর্ণনা করেছি রবীন্দ্রনাথের চেতনায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন-

"আমার রাত পোহালো শারদ প্রাতে।
বাঁশি, তোমায় দিয়ে যাব কাহার হাতে।
তোমার বুকে বাজল ধ্বনি
বিদায়গাথা, আগমনী, কত যে--
ফাল্গুনে শ্রাবণে, কত প্রভাতে রাতে॥"
 
বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে কিংবা শহড়ের জলাধারের পাশে কাঁশফুল জানান দেয় শরতের কথা, যা প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথের কবিতায়ও। শুভ্র মেঘের রথে চড়ে সকাল-দুপুর আর অলৌকিক সন্ধ্যার পর ভরা-পূর্ণিমায় ঢাকের শব্দ ভেসে আসে দূর গ্রাম থেকে, রবীন্দ্র সসংগীতের সাথে। নির্জন মাঠে নিঃশব্দে বেড়ে ওঠে নিকট ভবিষ্যতের আমন, যেন রবির সুভাগমন। নিশুতি রাত একটু গড়ালে শাপলা-শালুকরা পৃথিবীর মোহমায়ায় দু-একটি পাপড়ির ভাঁজ খোলে, রবির কবিতার ছন্দে। উদাস দুপুরেও খালের টলটলে জল একেবারেই স্থির। যেন শেফালির কোমল পাপড়ির অপেক্ষায় সে অনন্তকাল ধরে অপেক্ষা করে। এভাবেই শারদীয় দিন-রাত আসে, আসে শুভ্রতার প্রতীক হয়ে, আসে রবীন্দ্রনাথের লেখনীতে। শরতের আকাশ কখনো ধোয়া-মোছা এখানে রবীন্দ্রনাথ অনিবার্য। তিনি গানে গানে শরতের আলোছায়ার কথাই বলতে চেয়েছেন-

" শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি
ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি।
শরৎ তোমার শিশির-ধোওয়া কুন্তলে,
বনের-পথে লুটিয়ে-পড়া অঞ্চলে"
 
বর্ষার সেই বিশাল ঢেউয়ের ভয়াবহ নদীটাও শরতে শান্ত হয়ে আসে, কিন্তু বিশ্বকবির কবিতা চলতেই থাকে। শান্ত সেই নদীর দুকূল ছাপিয়ে তখন বানের পরিবর্তে আন্দোলিত কাঁশবন। কাঁশের পেলব পাপড়িগুলো দিনমান হাওয়ায় দোল খায়। অথবা উড়ে উড়ে যায় মেঘগুলোর সঙ্গে। রবীন্দ্রনাথ শরদ অনুভব করেছেন অন্য এক মাত্রায়। তিনি লিখেছেন :

‘এক মুহূর্তের জন্য প্রগাঢ় সুখ অনুভব করিলে, সেই মুহূর্তকে যেমন আর মুহূর্ত বলিয়া মনে হয় না— মনে হয় যেন তাহার সহিত অনন্তকালের পরিচয় ছিল, বোধহয় আমারও সেইরূপ এক শরত্কাল রাশীকৃত শরৎ হইয়া উঠিয়াছে। আমি সেই শরতের মর্মের মধ্য দিয়া যেন বহুসহস্র সুদূর পরম্পরা দেখিতে পাই— দীর্ঘ পথের দুই পার্শ্ববর্তী বৃক্ষশ্রেণী যেমন অবিচ্ছিন্ন সংহতভাবে দেখা যায়, সেইরূপে অর্থাৎ সবসুদ্ধ মিলিয়া একটা নিবিড় শারদ আনন্দের ভাবরূপে। আমার মনে হয় স্বভাবতই শরত্কাল স্মৃতির কাল এবং বসন্ত বর্তমান আকাঙ্ক্ষার কাল। বসন্তে নবজীবনের চাঞ্চল্য, শরতে অতীত সুখ-দুঃখময় জীবনের পূর্ণতা। বাল্যকাল না গেলে যেন শরতের অতলস্পর্শ প্রশান্তি অনুভব করা যায় না।’
 
বর্ষা নানা কারণে আমাদের প্রিয় ঋতু হলেও সৌন্দর্যের দিক থেকে শরৎই অনন্য, রবির লেখনিতেও তা প্রকাশ পায়। এককভাবে প্রতিটি ঋতুকেই আলাদাভাবে উপভোগ করার মতো রূপ রয়েছে। ষড়ঋতুর রূপ হরেক রকম। শরতের দিনগুলোকে স্বপ্নের মতোই মনে হয়। চারপাশে ছড়িয়ে থাকে অনেক স্বপ্ন। বিশ্বকবি সেসব স্বপ্ন কুড়িয়ে নিয়ে কতকিছুইনা ভাবতে বসেন। শরতের আকাশ, শরতের নদী, শরতের ফুল— সবকিছুই কেমন যেন শান্ত মায়াময়, রবি ঠাকুরের লেখায়। শরতের এই শুভ্র রূপ পবিত্রতার প্রতীক। বিলের শাপলা, নদীতীরের কাশফুল, আঙিনার শিউলি— এরা সবাই কোমল, পবিত্র। দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। যখন শিশিরের শব্দের মতো টুপটাপ শিউলি ঝরে, তখন অনুভবে শরৎ আসে। কাশবনে দলবেঁধে আসে চড়ুই পাখিরা। নদী শান্ত হয়ে আসে। তখন থাকে না তার দুকূল-ছাপানো বিপুল জলরাশির উত্তাল ঢেউ। আর শরতের নদী মানেই দুই পাড়ে কাশবনের ছোট ছোট রুপালি ঢেউ। বাংলা ছাড়া এমন অনাবিল সৌন্দর্যভূমি আর কোথায় পাওয়া যাবে, তাইতো বিশ্বকবির লেখনি এ বাংলায় এসেই পূর্ণতা পেয়েছে।
 
শরতের এই স্নিগ্ধ শোভাকে আরো মহিমান্বিত করে এ মৌসুমের বিচিত্র ফুলেরা। নদী বা জলাধারে ফোটে কাশঁফুল, ঘরের আঙিনায় ফোটে শিউলি বা শেফালি, খাল-বিল-পুকুর-ডোবায় থাকে অসংখ্য পদ্ম-শাপলা ফুল। আর শেষরাতের মৃদু কুয়াশায় ঢেকে থাকা শেফালি বা মায়াবি বিভিন্ন ফুল, যেন আরো রূপসী হয়ে ওঠে। শিশিরভেজা শিউলি, বাতাসে মৃদু দোল খাওয়া কাশঁবনের মঞ্জরি, পদ্ম-শাপলা-শালুকে আচ্ছন্ন জলাভূমি শরতের চির মহিমান্বিত রূপ, রবিঠাকুরের বর্ণনায় তা হয়েছে অপরূপ। সত্যিই বিচিত্র রূপ নিয়ে শরৎ আমাদের প্রকৃতিতে এবং চেতনায় ধরা দেয়। আমাদের অন্য ঋতুগুলো অনেক ফুলের জন্য বিখ্যাত হলেও মাত্র কয়েকটি ফুল নিয়েই শরৎ গরবিনী।
 
শরৎ মানেই শিউলি ফোটার দিন। শিউলির মধুগন্ধ ভেসে বেড়ানোর দিন। শিউলির আরেক নাম শেফালি। রবীন্দ্রনাথ অন্তত দশেক গান ও এক কুড়ির বেশি কবিতায় শিউলির প্রসঙ্গ এনেছেন নানাভাবে নানা মহিমায়। শিউলির ভেতরেই যেন তিনি শরতের সব সৌন্দর্য খুঁজে পেয়েছেন। বিশ্বকবি তার কবিতায় শিউলির বন্ধনায় গেয়েছেন-

‘যখন শিউলি ফুলে কোলখানি ভরি,
দুটি পা ছড়ায়ে দিয়ে আনত বয়ানে।’
‘যখন শরৎ কাঁপে শিউলি ফুলের হরষে।’
‘প্রশান্ত শিউলি ফোটা প্রভাত শিশিরে ছলোছলো।'
 
'বিস্মৃতি জাগিয়া উঠা' ঋতুরানী শরৎ সম্পর্কে বলতে গিয়ে এ কথাটাই বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। স্মৃতি জাগানিয়া শরতের বর্ণনায় 'শারদা' নামক সুন্দর ও প্রাঞ্জলভাবে কবিগুরু লিখেছেন -

"ওই শুনি শূন্যপথে রথ
ও নহে শারদমেঘে লঘু গরজন ।
কাহার আসার আশে নীরবে অবনী
আকুল শিশিরজলে ভাসায় নয়ন!
কার কন্ঠহার হ'তে সোনার ছটায়
চারি দিকে ঝলমল শারদ-কিরণ!
প্রফুল্ল মালতী বনে প্রভাতে লুটায়
কাহার অমল শুভ্র অঞ্চল-বসন!
কাহার মঞ্জুল হাসি, সুগন্ধ নিশ্বাস
নিকুঞ্জে ফুটায়ে তুলে শেফালি কামিনী।
ওকি রাজহংসরব, ওই কলভাষ?
নহে গো, বাজিছে অঙ্গে কঙ্কণ কিঙ্কিনী।
ছাড়িয়া অনন্তধাম সৌন্দর্য-কৈলাস,
আসিছেন এ বঙ্গের আনন্দ-রূপিণী।"
 

"হেমন্তের আবির্ভাবে বিশ্বকবির সাথে"

"হেমন্তের আবির্ভাবে বিশ্বকবির সাথে"
 
শীতের পরে যখন বসন্ত আসে মনটা তখন যেমন ফুরফুরে লাগে, ঠিক তেমনি গ্রীষ্মের পরে হেমন্ত এলে মনে রবি ঠাকুরের কথাগুলো ভাসে৷ ক্যালেন্ডারের পাতায় রবিবার থেকে হেমন্তের শুরু, অর্থাৎ মেঘলা আকাশ, যখন ইচ্ছে বৃষ্টি বা রোদ সেই সাথে বাতাস আর ঠান্ডা, সংগে রবীন্দ্রনাথের গান ও কবিতা৷ ক্যালেন্ডারের হিসেবে হেমন্ত যখনই শুরু হোক না কেন হেমন্তের আবহাওয়া কিন্তু বেশ কিছুদিন আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়।
হেমন্ত হলো ষড়ঋতুর ৪র্থ ঋতু, যা কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস নিয়ে সমৃদ্ধ। এর পরে আসে শীত, তাই হেমন্তকে বলা হয় শীতের পূর্বাভাস।
তাই এ ঋতুকে নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "হিমের রাতে" গানটিতে লিখেছেন:
'হিমের রাতে ওই গগনের দীপগুলিরে,
হেমন্তিকা করল গোপন আঁচল ঘিরে।
ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো ‘দীপালিকায় জ্বালাও আলো,
জ্বালাও আলো, আপন আলো, সাজাও আলোয় ধরিত্রীরে।’
 
হেমন্তের মাসদ্বয়কে কৃত্তিকা ও আর্দ্রা এ দুটি তারার নাম অনুসারে নাম রাখা হয়েছে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের। কার্তিকের পর আসে সর্বজনীন লৌকিক উৎসব নবান্নে। ‘অগ্র’ ও ‘হায়ণ’ এর অর্থ যথাক্রমে ‘ধান’ ও ‘কাটার মওসুম’, তাই অগ্রাহায়নে হয় নবান্ন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মনে করেন হেমন্তে শান্তির বার্তা বয়ে যায় সকলের গৃহে।
 
বিশ্বকবি তাঁর "নৈবদ্যে স্তব্ধতা" কবিতায় হেমন্তকে নিয়ে তাইত লিখেছেনঃ
‘আজি হেমন্তের শান্তি ব্যাপ্ত চরাচরে
জনশূন্য ক্ষেত্র মাঝে দীপ্ত দ্বিপ্রহরে
শব্দহীন গতিহীন স্তব্ধতা উদার
রয়েছে পড়িয়া শ্রান্ত দিগন্ত প্রসার
স্বর্ণশ্যাম ডানা মেলি।’
আমাদের কথা-
হেমন্তের আগমনে আছি বিশ্বকবির সনে,
রবিবারে রবির সাথে,
রবি দিবসে পর্ব- এ শুভক্ষণে

♥♥ বাউল রবীন্দ্রনাথকে বরণ ♥♥

♥♥ বাউল রবীন্দ্রনাথকে বরণ ♥♥
বাংলা সাহিত্যকে এত বিস্তৃতভাবে বিশ্বকবি দিয়ে গেছেন, যা বলার অপেক্ষা রাখে না। কি নেই যা নিয়ে তিনি কলম ধরেননি। কি নেই যা নিয়ে তিনি অনুভুতি প্রকাশ করেননি। কি নেই যা নিয়ে তার প্রেমে পড়া যায় না। কি নেই যা সাহিত্যকে বিকশিত করে না বিশেষ করে বাংলা সাহিত্যকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দরকার ছিলো না, কিন্তু দরকার ছিলো বাংলা সাহিত্যের। পুরস্কার না পেলে হিন্দুরা বুঝতো না যে রবীন্দ্রনাথ কত বড়ো কবি; আর মুসলমানেরা রহিম, করিমকে দাবি করতো বাংলার শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা, গান ও ছোটগল্প কিংবা অন্য সব লেখা দেখে মনে হয়, যদি বিশ্ব তাকে সাহিত্যে আরও ১০ (দশ) বার নোবেল পুরস্কার দিত তাহলেও কম পড়ত- আমাদের কথা:
 
“রবিবারে রবির সাথে” পর্বে করি রবিকে সশ্রদ্ধ স্মরণ,
রবিবারে এবার বিষয় বাউল রবীন্দ্রনাথকে বরণ।
লোকসংগীতে বাউল বহুবার স্মরণ করেছেন রবি,
কবিতা ও গানে রবির স্বশ্রদ্ধ বাউলা ভক্তি।
রবীন্দ্রনাথের লেখায় বাউলা প্রভাব,
কবিতা ও গানে বাউল চর্চার নেই যে অভাব।

আজ রবিবারের রবির সাথে প্রথম পর্বে বাউল রবীন্দ্রনাথকে বরণ করা নিয়েই আজ কিছুটা সময় নষ্ট করব আপনাদের। বাউল প্রভাব সম্পর্কে রবি নিজেই বলেছেন আমার জ্ঞাত সারে ও অজ্ঞাত সারে বাউল ডুকেছে আমার লেখায়। নিন্দুকেরা বলেন তারা নাকি আবিষ্কার করেছেন রবি নাকি বাউলকে নকল করেন! আরে যেখানে বাউলকে রবি পছন্দ করেন, তার লেখায় বাউলের প্রভাব রয়েছে বলেন সেখানে নিন্দুকেরা কিভাবে আবিস্কার করেছেন, সব ভাওতাবাজি বা অপপ্রচার মাত্র। আমরা বলি-

নিন্দুকেরা বলছে রবি করেছে বাউলের নকল,
রবিতো বলেছেন আমার লেখায় জানায়-অজানায় ঢুকেছে বাউল।
যেখানে রবির সাবলীল স্বীকার,
সেখানে হল কিভাবে নিন্দুকের আবিস্কার।
হে নিন্দুক বন্ধ কর তোমার অপপ্রচার,
ভেঙ্গে ঐ অপপ্রচার রহিবে বাউল বিশ্বকবির ।
 
কথিত রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উদ্দেশ্যে করি লালন বলেন-
'পারে যদি যাবি রবী গুরুর চরণ ভুলো না, গুরুর চরণ ভুল করিলে পারে যাওয়া ঘটবে না।'
 
লালন সঙ্গীতের দার্শনিক ও নান্দনিক প্রভাব যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে প্রচন্ড

ভাবে আলোড়িত করে তুলেছিলো। তখন রবীন্দ্রনাথের চেতনার জগতে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হয়। হাল সংস্কৃতিতে লালিত কবি রবীন্দ্রনাথ ধীরে ধীরে রবীন্দ্র বাউলে পরিণত হন। প্রেম ও প্রকৃতির কবি ধীরে ধীরে ঈশ্বর কেন্দ্রিক ও মানবকেন্দ্রিক হয়ে ওঠেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা, গান, কবিতা, গল্প, নাটক সবই বাউল দর্শন এবং বাউল ভাবে প্রভাবিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ শুধু যে বাউল গানের সুরকেই নিয়েছেন তা নয়, তিনি অনেক ক্ষেত্রে অনেক বাউল গানের বাণীকেও গ্রহণ করেছেন। রবীন্দ্রনাথের গানে বাউল দর্শন এবং বাউল গানের কথা ও সুরের প্রভাব প্রত্যক্ষভাবে পড়ে। তাঁর প্রায় ৬৬টি গান বাউল সুরের আঙ্গিকে রচিত। বাউল সঙ্গীতের ভাষার সরলতা, ভাবের গভীরতা ও সুরের আবেগ রবীন্দ্রনাথকে টেনে এনেছে বাংলার সোঁদা মাটিতে। ১৯১৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ফালগুনী নাটক রচনা করে সেখানে অন্ধ বাউল চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯১৬ সালে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর রবীন্দ্রনাথের একটি ছবি আঁকেন। ছবিটিতে দেখা যায় বাউল রবীন্দ্রনাথ একতারা হাতে বিভোর হয়ে নাচছেন।
 
বাউল রবিকে নিয়ে আমরা বলি-
রবি তোমায় স্মরণ করি লোকসংগীতের গহীনে,
বিশ্বকবির গানে ও প্রাণে বাউল মনের ভিতর দোলা আনে,
তোমার কবিতা ও গানে বাউলা প্রভাব, জীবনের সুপ্ত বাসনা,
বাউল কয় আমি কোথা পাবো তারে, রবি কয় আমার সোনার বাংলা!

বাউল রবীন্দ্রনাথকে বরণ করে বলছি শেষ কথা-
“শুভ্রতার নির্মল ছোয়ায় রবি হলো বাউল,
বাউলের সুরেলা মোহনায় প্রভাবিত বিশ্বকবি বলে সর্বকুল।”

"নি:সঙ্গ কাক এবং আমি"

"নি:সঙ্গ কাক এবং আমি"
                                    - মোঃ রেজাউল আলম
মেঘনায় যেতে যেতে উড়ে এলো নি:সঙ্গ কাক,
একলা বসে ভাবছি আমি, দিবে কি সেই ডাক।
কুল কুল রবে ভেসে যায় বাউলা নদী,...
মন ভরিয়ে প্রাণ জুড়িয়ে কত সুন্দর ছবি।


নদী বাহিত এ দেশ,
প্রিয় বাংলাদেশ।
প্রাণের নদী-মেঘনা নদী,
রূপের নেইকো শেষ!
কাঁশ ফুলে সাজানো নদীর দুই পাড়,
শ্যামল চরে নদীর স্রোতে ভেসেছে অপার।

মেঘনায় যেতে যেতে উড়ে এলো নি:সঙ্গ কাক,
একলা বসে ভাবছি আমি, দিবে কি সেই ডাক।
কুল কুল রবে ভেসে যায় বাউলা নদী,
মন ভরিয়ে প্রাণ জুড়িয়ে কত সুন্দর ছবি।

একুলে তার বকের সারি,
ঐকুলে মোর মামার বাড়ি।
স্রোতের টানে সুরের টানে,
হৃদয়ে মোর ঢেউ আনে।
নদীর ঢেউয়ে ভাসছে জাহাজ-নৌকা,
সঙ্গে আরো ভাসে চিরচেনা কচুরিপানা।

মেঘনায় যেতে যেতে উড়ে এলো নি:সঙ্গ কাক,
একলা বসে ভাবছি আমি, দিবে কি সেই ডাক।
কুল কুল রবে ভেসে যায় বাউলা নদী,
মন ভরিয়ে প্রাণ জুড়িয়ে কত সুন্দর ছবি।

মেঘনার ঘোলা পানি মনকে করে বাউলা,
চুল উড়িয়ে কাক তাড়িয়ে হয়ে যাই আউলা।
নদীর বুকে ইলিশের বাড়ি,
মাছ ধরার নৌকা সারি সারি।
প্রাণের দেশে,
অবুজ বেসে,
নদীর বুকে সারস পাখি উঠল হেসে।

মেঘনায় যেতে যেতে উড়ে এলো নি:সঙ্গ কাক,
একলা বসে ভাবছি আমি, দিবে কি সেই ডাক।
কুল কুল রবে ভেসে যায় বাউলা নদী
মন ভরিয়ে প্রাণ জুড়িয়ে কত সুন্দর ছবি।
মেঘনা নদী, চাঁদপুর
বৃহস্পতিবার, ১৩.১০.২০১৬