বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৬

"মনের বাড়িতে মন খারাপের অসুখ"

"মনের বাড়িতে মন খারাপের অসুখ"
                   - মো: রেজাউল আলম।
তুমি বললে, "চলে যাব আমি",
বলব কি তোমায়,...
যা ইচ্ছা হয় তোমার, বাঁধা কিভাবে দেই, তাই কর যা তোমার ভাল মনে হয়।
চলে যাওয়া পথে তাকিয়ে রব না আর,
কেন গেলে চলে ভাববো না আরেকবার,
মন খারাপের ঔষধ নিয়ে চলে গেলে বাড়ি,
মনের কি দিব দোষ।
তোমাকে খুজে পেতে মন চাইলেও,
হবো না ব্যাকুল।


সামান্যতমা তোমার অসামন্য ক্ষমা,
হৃদয় ভেঙ্গে যায়, ফিরবে কি নিরুপমা,
চায়ের কাপগুলোয় ধুলো আর ময়লা,
পোকা-মাকড় খেলা করে অন্ধকারে।
নিরুপমা তোমার রিনিঝিনি বিচরণ মনের বাড়িতে,
অনিদ্রা অবিরত বাস করে বর্তমানে,
মনের বাড়ির চারিপাশে, মন খারাপ ধরে ঘিরে।

চলে আসার পথে
ছিল না কোন বাঁধা,
জীবন যেখানে যেমন, ছুড়ে দেয় কাঁদা।
নিরব কেন তুমি, চলে যাওয়া নিরূপমা,
নি:সঙ্গ ঘরে ফিরে ফিরে দেখা।
টিভির ক্রিনে পড়ে আছে ময়লার জাল,
তোমার চ্যানেলগুলো পাল্টায় না কেও আর।

মনের জানালায় সুরের বিষন্ন বিচরণ,
চলার পথে বিষের কাঁটা,
মনের ভিতর গেঁথে থাকে সারাক্ষণ।
মন খারাপে নেই শান্তি, নেই সুখ,
নেই কাছের মানুষ,
তোমার চলে যাওয়া আমায় করেছে বিমুখ,
আজ মনের বাড়িতে মন খারাপের অসুখ।

--------------------
০৭ ডিসেম্বর, ২০১৬
দক্ষিণখান, উত্তরা, ঢাকা।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর -
আজকের দিনে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশের প্রথম পর্যায়ের সকল বুদ্ধিজীবীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে।
এ কাজে এদেশেরই রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর মূর্খ লোকেরা,
পাকিস্তানের মূর্খ সেনাবাহিনীকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে।
দু:খজনক হলেও সত্য, যারা তখনও মূর্খ ছিল এখনও মূর্খই রয়ে গেল। ...
কিন্তু বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখা যায়নি,
বাংলাদেশ মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে,
দাড়িয়ে রবে চীরকাল।

আর তাই মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ আমাদের শোক, আবেগ ও প্রেরণার অন্যতম প্রতিকি উৎস,
আমরা তোমাদের ভুলব না,
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা...!

মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৬

"রবিবারে নৌকাডুবি উপন্যাস: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বর্ণিল প্রয়াশ"

"রবিবারে নৌকাডুবি উপন্যাস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বর্ণিল প্রয়াশ"
 
নৌকাডুবি’ একটি ঘটনা বহুল উপন্যাস। কলকাতায় আইন পড়াকালীন হেমামালিনীর সঙ্গে রমেশের প্রেম হয়। পিতা ব্রজমোহনের বাল্যবন্ধু অকাল প্রয়াত ঈশানের কন্যা সুশীলার সঙ্গে রমেশের হঠাৎ করেই বিয়ে হয়, রমেশের অমতেই। নববধূকে নিয়ে নদীপথে আসার সময় হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকা বিপর্যস্ত হয়, যা নৌকাডুবি উপন্যাসের মূল কাহিনীর থ্রিলার। পরিবারের অন্যরা নৌকাডুবিতে হারিয়ে যায়। রমেশ জ্ঞান ফিরে পেয়ে অন্যদের খুঁজতে গিয়ে বালির-তটে লাল চেলী-পরা এক নববধূকে দেখতে পায়। এই বধূটির সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক নিবিড় হয়ে ওঠার মুখে রমেশ জানতে পারল যে, সে তার স্ত্রী সুশীলা নয়, কাহিনী আরও মর্মস্পর্শী হলো। অন্য কারো নববধূ ছিল কমলা। এই বালিকা বধূ কমলাকে রমেশ কলকাতার স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়। এই সকল নিয়তি ও বাস্তবতার নানা কাহিনী নিয়েই গড়ে উঠেছে "নৌকাডুবি"র কাহিনী। আবার পাঠকের কাছে রমেশ ও হেমামালিনীর প্রেমের পরিণয় রহস্যেই রয়ে যায়, যা বিশ্বকবির বুননে রহস্য ও বর্ণিলতার অসাধারণ মিশ্রণ।
 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত বর্ণিল ‘নৌকাডুবি’ উপন্যাস থেকে কিছু উক্তি প্রিয় পাঠকের সাথে শেয়ার করলাম-...
(ক) মানুষ তো ফুল কিংবা প্রজাপতি মাত্র নয় যে, ভালো দেখার বিচারটাই সর্বাগ্রে তুলিতে হইবে ।
(খ) ভুল হইতে, বেসুর হইতে, অক্ষমতা হইতে আনন্দ পাইবার শক্তি ভালোবাসারই আছে ।
(গ) প্রয়োজন রাজার মতো আপনার পুরা সময় লয়-আর ভালবাসা কাঙ্কাল ।
(ঘ) কতকগুলি জিনিস আছে, যা আপনার ঝোকেই অগ্রসর হয়ে পড়ে, তাহাকে আর পশ্রয় দিতে হয় না – বাড়িতে বাড়িতে আপনিই বাড়াবাড়িতে গিয়া পৌছায় ।
(ঙ) যেখানে নির্ভরতাও নাই, স্বাধীনতাও নাই, সেখানে প্রাণ বাঁচে কী করিয়া ।
(চ) আমার সঙ্গে যাহার বোঝাপড়ার কোনো সম্পর্ক নাই তাহাকে বুঝিতে চেষ্ঠা করাই ধৃষ্টতা । কিন্তু পৃথিবীতে দৈবাৎ এমন এক একটি মানুষ মেলে দৃষ্টিপাত মাত্রই যাহার সঙ্গে সম্বন্ধ স্থির হইয়া যায়।
সুতরাং নির্মল ভালোবাসা, নির্মম নিয়তি, কঠিন বাস্তবতা, সামাজিক বন্ধন, পারিবারিক দাম্পত্য, দায়িত্ববোধ সর্বোপরি প্রণয়ের রহস্যময়তায় ভরপুর বিশ্বকবির নৌকাডুবি উপন্যাস। অসাধারণ অভিজ্ঞতা ও নিয়তির নির্মম বুনন নৌকাডুবি উপন্যাসে।
 
রবিবারে রবির সাথে
'নৌকাডুবি'তে আছি মিশে।

বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৬

অপার বাউল ফকির লালন সাইয়ের ১২৬-তম তিরোধান দিবসে অতল শ্রদ্ধা

"লালন ফকির নামে একজন বাউল সাধক হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, জৈন ধর্মের সমন্বয় করে কী যেন একটা বলতে চেয়েছেন - আমাদের সবারই সেদিকে মনোযোগ দেওয়া উচিৎ।" -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

“সব লোকে কয়, লালন ফকির হিন্দু কি যবন।
লালন বলে, আমার আমি না জানি সন্ধান।".....

“সব লোকে কয়
লালন কি জাত সংসারে।
লালন বলে জাতের কি রূপ
দেখলাম না তা-নজরে।।"
 
তার কোন জাত নেই, ধর্ম নেই, তিনি হলেন মানুষ। তিনি সত্যিই অতুলনীয়, তাঁর যা সৃষ্টিকর্ম রয়েছে, তাতে তার অনেক বড় সম্মান পাওনা, কিন্তু দুর্ভাগ্য বা সৌভাগ্য যাই হোক তিনি তা পাননি। এই মরমী সাধকের রয়েছে অজস্র অমূল্য সৃষ্টি। তার সঙ্গে কাউকে তুলনা করা চলেনা। তার তুলনা শুধু তিনি নিজেই। কিন্তু যা সবসময় হয় আমাদের দেশে, গুণীজন পায়না যোগ্য সম্মান, মর্যাদা। অবশ্য তিনি এসবের অনেক উর্ধ্বে ছিলেন। তিনি এ ধরণের সম্মান বা মর্যাদার কাঙ্গালী ছিলেন না। তিনি স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিলেন। তাইতো তিনি গেয়েছেন-

'আমি অপার হয়ে বসে আছি
ও হে দয়াময়,
পারে লয়ে যাও আমায়।।
আমি একা রইলাম ঘাটে
ভানু সে বসিল পাটে-
(আমি) তোমা বিনে ঘোর সংকটে
না দেখি উপায়।।
নাই আমার ভজন-সাধন
চিরদিন কুপথে গমন-
নাম শুনেছি পতিত-পাবন
তাইতে দিই দোহাই।।
অগতির না দিলে গতি
ঐ নামে রবে অখ্যাতি-
লালন কয়, অকুলের পতি
কে বলবে তোমায়।।'
 
সেই অপার বাউল ফকির লালন সাইয়ের তিরোধান দিবসে (আজ) অতল শ্রদ্ধা জানাই....
 
সোনার মানুষ ভাসছে রসে
যে জেনেছে রসপন্থি সে
দেখিতে পায় অনায়াসে।।
তিনশো ষাট রসের নদী
বেগে ধায় ব্রহ্মাণ্ড ভেধী।
তার মাঝে রূপ নিরবধি
ঝলক দিচ্ছে এই মানুষে।।
মাতা পিতার নাই ঠিকানা
অচিন দেশে বসত খানা।
আজগুবি তার আওনা যাওনা
কারণবারির যোগ বিশেষে।।
অমাবস্যায় চন্দ্র উদয়
দেখতে যার বাসনা হৃদয়।
লালন বলে থেকো সদাই
ত্রিবেনীর ঘাটে বসে।।

♥ রবীন্দ্রনাথের শারদ প্রাতে, শরতের মহিমায় বিস্মৃতি জাগানিয়া ♥

রবীন্দ্রনাথের শারদ প্রাতে, শরতের মহিমায় বিস্মৃতি জাগানিয়া
"রবিবারে রবির সাথে" পর্ব-২ এবার আমার ভাবনা "রবীন্দ্রনাথের শারদ প্রাতে শরতের মহিমায় বিস্মৃতি জাগানিয়া"। শরতের বর্ণনা করেছি রবীন্দ্রনাথের চেতনায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন-

"আমার রাত পোহালো শারদ প্রাতে।
বাঁশি, তোমায় দিয়ে যাব কাহার হাতে।
তোমার বুকে বাজল ধ্বনি
বিদায়গাথা, আগমনী, কত যে--
ফাল্গুনে শ্রাবণে, কত প্রভাতে রাতে॥"
 
বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে কিংবা শহড়ের জলাধারের পাশে কাঁশফুল জানান দেয় শরতের কথা, যা প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথের কবিতায়ও। শুভ্র মেঘের রথে চড়ে সকাল-দুপুর আর অলৌকিক সন্ধ্যার পর ভরা-পূর্ণিমায় ঢাকের শব্দ ভেসে আসে দূর গ্রাম থেকে, রবীন্দ্র সসংগীতের সাথে। নির্জন মাঠে নিঃশব্দে বেড়ে ওঠে নিকট ভবিষ্যতের আমন, যেন রবির সুভাগমন। নিশুতি রাত একটু গড়ালে শাপলা-শালুকরা পৃথিবীর মোহমায়ায় দু-একটি পাপড়ির ভাঁজ খোলে, রবির কবিতার ছন্দে। উদাস দুপুরেও খালের টলটলে জল একেবারেই স্থির। যেন শেফালির কোমল পাপড়ির অপেক্ষায় সে অনন্তকাল ধরে অপেক্ষা করে। এভাবেই শারদীয় দিন-রাত আসে, আসে শুভ্রতার প্রতীক হয়ে, আসে রবীন্দ্রনাথের লেখনীতে। শরতের আকাশ কখনো ধোয়া-মোছা এখানে রবীন্দ্রনাথ অনিবার্য। তিনি গানে গানে শরতের আলোছায়ার কথাই বলতে চেয়েছেন-

" শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি
ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি।
শরৎ তোমার শিশির-ধোওয়া কুন্তলে,
বনের-পথে লুটিয়ে-পড়া অঞ্চলে"
 
বর্ষার সেই বিশাল ঢেউয়ের ভয়াবহ নদীটাও শরতে শান্ত হয়ে আসে, কিন্তু বিশ্বকবির কবিতা চলতেই থাকে। শান্ত সেই নদীর দুকূল ছাপিয়ে তখন বানের পরিবর্তে আন্দোলিত কাঁশবন। কাঁশের পেলব পাপড়িগুলো দিনমান হাওয়ায় দোল খায়। অথবা উড়ে উড়ে যায় মেঘগুলোর সঙ্গে। রবীন্দ্রনাথ শরদ অনুভব করেছেন অন্য এক মাত্রায়। তিনি লিখেছেন :

‘এক মুহূর্তের জন্য প্রগাঢ় সুখ অনুভব করিলে, সেই মুহূর্তকে যেমন আর মুহূর্ত বলিয়া মনে হয় না— মনে হয় যেন তাহার সহিত অনন্তকালের পরিচয় ছিল, বোধহয় আমারও সেইরূপ এক শরত্কাল রাশীকৃত শরৎ হইয়া উঠিয়াছে। আমি সেই শরতের মর্মের মধ্য দিয়া যেন বহুসহস্র সুদূর পরম্পরা দেখিতে পাই— দীর্ঘ পথের দুই পার্শ্ববর্তী বৃক্ষশ্রেণী যেমন অবিচ্ছিন্ন সংহতভাবে দেখা যায়, সেইরূপে অর্থাৎ সবসুদ্ধ মিলিয়া একটা নিবিড় শারদ আনন্দের ভাবরূপে। আমার মনে হয় স্বভাবতই শরত্কাল স্মৃতির কাল এবং বসন্ত বর্তমান আকাঙ্ক্ষার কাল। বসন্তে নবজীবনের চাঞ্চল্য, শরতে অতীত সুখ-দুঃখময় জীবনের পূর্ণতা। বাল্যকাল না গেলে যেন শরতের অতলস্পর্শ প্রশান্তি অনুভব করা যায় না।’
 
বর্ষা নানা কারণে আমাদের প্রিয় ঋতু হলেও সৌন্দর্যের দিক থেকে শরৎই অনন্য, রবির লেখনিতেও তা প্রকাশ পায়। এককভাবে প্রতিটি ঋতুকেই আলাদাভাবে উপভোগ করার মতো রূপ রয়েছে। ষড়ঋতুর রূপ হরেক রকম। শরতের দিনগুলোকে স্বপ্নের মতোই মনে হয়। চারপাশে ছড়িয়ে থাকে অনেক স্বপ্ন। বিশ্বকবি সেসব স্বপ্ন কুড়িয়ে নিয়ে কতকিছুইনা ভাবতে বসেন। শরতের আকাশ, শরতের নদী, শরতের ফুল— সবকিছুই কেমন যেন শান্ত মায়াময়, রবি ঠাকুরের লেখায়। শরতের এই শুভ্র রূপ পবিত্রতার প্রতীক। বিলের শাপলা, নদীতীরের কাশফুল, আঙিনার শিউলি— এরা সবাই কোমল, পবিত্র। দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। যখন শিশিরের শব্দের মতো টুপটাপ শিউলি ঝরে, তখন অনুভবে শরৎ আসে। কাশবনে দলবেঁধে আসে চড়ুই পাখিরা। নদী শান্ত হয়ে আসে। তখন থাকে না তার দুকূল-ছাপানো বিপুল জলরাশির উত্তাল ঢেউ। আর শরতের নদী মানেই দুই পাড়ে কাশবনের ছোট ছোট রুপালি ঢেউ। বাংলা ছাড়া এমন অনাবিল সৌন্দর্যভূমি আর কোথায় পাওয়া যাবে, তাইতো বিশ্বকবির লেখনি এ বাংলায় এসেই পূর্ণতা পেয়েছে।
 
শরতের এই স্নিগ্ধ শোভাকে আরো মহিমান্বিত করে এ মৌসুমের বিচিত্র ফুলেরা। নদী বা জলাধারে ফোটে কাশঁফুল, ঘরের আঙিনায় ফোটে শিউলি বা শেফালি, খাল-বিল-পুকুর-ডোবায় থাকে অসংখ্য পদ্ম-শাপলা ফুল। আর শেষরাতের মৃদু কুয়াশায় ঢেকে থাকা শেফালি বা মায়াবি বিভিন্ন ফুল, যেন আরো রূপসী হয়ে ওঠে। শিশিরভেজা শিউলি, বাতাসে মৃদু দোল খাওয়া কাশঁবনের মঞ্জরি, পদ্ম-শাপলা-শালুকে আচ্ছন্ন জলাভূমি শরতের চির মহিমান্বিত রূপ, রবিঠাকুরের বর্ণনায় তা হয়েছে অপরূপ। সত্যিই বিচিত্র রূপ নিয়ে শরৎ আমাদের প্রকৃতিতে এবং চেতনায় ধরা দেয়। আমাদের অন্য ঋতুগুলো অনেক ফুলের জন্য বিখ্যাত হলেও মাত্র কয়েকটি ফুল নিয়েই শরৎ গরবিনী।
 
শরৎ মানেই শিউলি ফোটার দিন। শিউলির মধুগন্ধ ভেসে বেড়ানোর দিন। শিউলির আরেক নাম শেফালি। রবীন্দ্রনাথ অন্তত দশেক গান ও এক কুড়ির বেশি কবিতায় শিউলির প্রসঙ্গ এনেছেন নানাভাবে নানা মহিমায়। শিউলির ভেতরেই যেন তিনি শরতের সব সৌন্দর্য খুঁজে পেয়েছেন। বিশ্বকবি তার কবিতায় শিউলির বন্ধনায় গেয়েছেন-

‘যখন শিউলি ফুলে কোলখানি ভরি,
দুটি পা ছড়ায়ে দিয়ে আনত বয়ানে।’
‘যখন শরৎ কাঁপে শিউলি ফুলের হরষে।’
‘প্রশান্ত শিউলি ফোটা প্রভাত শিশিরে ছলোছলো।'
 
'বিস্মৃতি জাগিয়া উঠা' ঋতুরানী শরৎ সম্পর্কে বলতে গিয়ে এ কথাটাই বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। স্মৃতি জাগানিয়া শরতের বর্ণনায় 'শারদা' নামক সুন্দর ও প্রাঞ্জলভাবে কবিগুরু লিখেছেন -

"ওই শুনি শূন্যপথে রথ
ও নহে শারদমেঘে লঘু গরজন ।
কাহার আসার আশে নীরবে অবনী
আকুল শিশিরজলে ভাসায় নয়ন!
কার কন্ঠহার হ'তে সোনার ছটায়
চারি দিকে ঝলমল শারদ-কিরণ!
প্রফুল্ল মালতী বনে প্রভাতে লুটায়
কাহার অমল শুভ্র অঞ্চল-বসন!
কাহার মঞ্জুল হাসি, সুগন্ধ নিশ্বাস
নিকুঞ্জে ফুটায়ে তুলে শেফালি কামিনী।
ওকি রাজহংসরব, ওই কলভাষ?
নহে গো, বাজিছে অঙ্গে কঙ্কণ কিঙ্কিনী।
ছাড়িয়া অনন্তধাম সৌন্দর্য-কৈলাস,
আসিছেন এ বঙ্গের আনন্দ-রূপিণী।"
 

"হেমন্তের আবির্ভাবে বিশ্বকবির সাথে"

"হেমন্তের আবির্ভাবে বিশ্বকবির সাথে"
 
শীতের পরে যখন বসন্ত আসে মনটা তখন যেমন ফুরফুরে লাগে, ঠিক তেমনি গ্রীষ্মের পরে হেমন্ত এলে মনে রবি ঠাকুরের কথাগুলো ভাসে৷ ক্যালেন্ডারের পাতায় রবিবার থেকে হেমন্তের শুরু, অর্থাৎ মেঘলা আকাশ, যখন ইচ্ছে বৃষ্টি বা রোদ সেই সাথে বাতাস আর ঠান্ডা, সংগে রবীন্দ্রনাথের গান ও কবিতা৷ ক্যালেন্ডারের হিসেবে হেমন্ত যখনই শুরু হোক না কেন হেমন্তের আবহাওয়া কিন্তু বেশ কিছুদিন আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়।
হেমন্ত হলো ষড়ঋতুর ৪র্থ ঋতু, যা কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস নিয়ে সমৃদ্ধ। এর পরে আসে শীত, তাই হেমন্তকে বলা হয় শীতের পূর্বাভাস।
তাই এ ঋতুকে নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "হিমের রাতে" গানটিতে লিখেছেন:
'হিমের রাতে ওই গগনের দীপগুলিরে,
হেমন্তিকা করল গোপন আঁচল ঘিরে।
ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো ‘দীপালিকায় জ্বালাও আলো,
জ্বালাও আলো, আপন আলো, সাজাও আলোয় ধরিত্রীরে।’
 
হেমন্তের মাসদ্বয়কে কৃত্তিকা ও আর্দ্রা এ দুটি তারার নাম অনুসারে নাম রাখা হয়েছে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের। কার্তিকের পর আসে সর্বজনীন লৌকিক উৎসব নবান্নে। ‘অগ্র’ ও ‘হায়ণ’ এর অর্থ যথাক্রমে ‘ধান’ ও ‘কাটার মওসুম’, তাই অগ্রাহায়নে হয় নবান্ন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মনে করেন হেমন্তে শান্তির বার্তা বয়ে যায় সকলের গৃহে।
 
বিশ্বকবি তাঁর "নৈবদ্যে স্তব্ধতা" কবিতায় হেমন্তকে নিয়ে তাইত লিখেছেনঃ
‘আজি হেমন্তের শান্তি ব্যাপ্ত চরাচরে
জনশূন্য ক্ষেত্র মাঝে দীপ্ত দ্বিপ্রহরে
শব্দহীন গতিহীন স্তব্ধতা উদার
রয়েছে পড়িয়া শ্রান্ত দিগন্ত প্রসার
স্বর্ণশ্যাম ডানা মেলি।’
আমাদের কথা-
হেমন্তের আগমনে আছি বিশ্বকবির সনে,
রবিবারে রবির সাথে,
রবি দিবসে পর্ব- এ শুভক্ষণে

♥♥ বাউল রবীন্দ্রনাথকে বরণ ♥♥

♥♥ বাউল রবীন্দ্রনাথকে বরণ ♥♥
বাংলা সাহিত্যকে এত বিস্তৃতভাবে বিশ্বকবি দিয়ে গেছেন, যা বলার অপেক্ষা রাখে না। কি নেই যা নিয়ে তিনি কলম ধরেননি। কি নেই যা নিয়ে তিনি অনুভুতি প্রকাশ করেননি। কি নেই যা নিয়ে তার প্রেমে পড়া যায় না। কি নেই যা সাহিত্যকে বিকশিত করে না বিশেষ করে বাংলা সাহিত্যকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দরকার ছিলো না, কিন্তু দরকার ছিলো বাংলা সাহিত্যের। পুরস্কার না পেলে হিন্দুরা বুঝতো না যে রবীন্দ্রনাথ কত বড়ো কবি; আর মুসলমানেরা রহিম, করিমকে দাবি করতো বাংলার শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা, গান ও ছোটগল্প কিংবা অন্য সব লেখা দেখে মনে হয়, যদি বিশ্ব তাকে সাহিত্যে আরও ১০ (দশ) বার নোবেল পুরস্কার দিত তাহলেও কম পড়ত- আমাদের কথা:
 
“রবিবারে রবির সাথে” পর্বে করি রবিকে সশ্রদ্ধ স্মরণ,
রবিবারে এবার বিষয় বাউল রবীন্দ্রনাথকে বরণ।
লোকসংগীতে বাউল বহুবার স্মরণ করেছেন রবি,
কবিতা ও গানে রবির স্বশ্রদ্ধ বাউলা ভক্তি।
রবীন্দ্রনাথের লেখায় বাউলা প্রভাব,
কবিতা ও গানে বাউল চর্চার নেই যে অভাব।

আজ রবিবারের রবির সাথে প্রথম পর্বে বাউল রবীন্দ্রনাথকে বরণ করা নিয়েই আজ কিছুটা সময় নষ্ট করব আপনাদের। বাউল প্রভাব সম্পর্কে রবি নিজেই বলেছেন আমার জ্ঞাত সারে ও অজ্ঞাত সারে বাউল ডুকেছে আমার লেখায়। নিন্দুকেরা বলেন তারা নাকি আবিষ্কার করেছেন রবি নাকি বাউলকে নকল করেন! আরে যেখানে বাউলকে রবি পছন্দ করেন, তার লেখায় বাউলের প্রভাব রয়েছে বলেন সেখানে নিন্দুকেরা কিভাবে আবিস্কার করেছেন, সব ভাওতাবাজি বা অপপ্রচার মাত্র। আমরা বলি-

নিন্দুকেরা বলছে রবি করেছে বাউলের নকল,
রবিতো বলেছেন আমার লেখায় জানায়-অজানায় ঢুকেছে বাউল।
যেখানে রবির সাবলীল স্বীকার,
সেখানে হল কিভাবে নিন্দুকের আবিস্কার।
হে নিন্দুক বন্ধ কর তোমার অপপ্রচার,
ভেঙ্গে ঐ অপপ্রচার রহিবে বাউল বিশ্বকবির ।
 
কথিত রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উদ্দেশ্যে করি লালন বলেন-
'পারে যদি যাবি রবী গুরুর চরণ ভুলো না, গুরুর চরণ ভুল করিলে পারে যাওয়া ঘটবে না।'
 
লালন সঙ্গীতের দার্শনিক ও নান্দনিক প্রভাব যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে প্রচন্ড

ভাবে আলোড়িত করে তুলেছিলো। তখন রবীন্দ্রনাথের চেতনার জগতে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হয়। হাল সংস্কৃতিতে লালিত কবি রবীন্দ্রনাথ ধীরে ধীরে রবীন্দ্র বাউলে পরিণত হন। প্রেম ও প্রকৃতির কবি ধীরে ধীরে ঈশ্বর কেন্দ্রিক ও মানবকেন্দ্রিক হয়ে ওঠেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা, গান, কবিতা, গল্প, নাটক সবই বাউল দর্শন এবং বাউল ভাবে প্রভাবিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ শুধু যে বাউল গানের সুরকেই নিয়েছেন তা নয়, তিনি অনেক ক্ষেত্রে অনেক বাউল গানের বাণীকেও গ্রহণ করেছেন। রবীন্দ্রনাথের গানে বাউল দর্শন এবং বাউল গানের কথা ও সুরের প্রভাব প্রত্যক্ষভাবে পড়ে। তাঁর প্রায় ৬৬টি গান বাউল সুরের আঙ্গিকে রচিত। বাউল সঙ্গীতের ভাষার সরলতা, ভাবের গভীরতা ও সুরের আবেগ রবীন্দ্রনাথকে টেনে এনেছে বাংলার সোঁদা মাটিতে। ১৯১৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ফালগুনী নাটক রচনা করে সেখানে অন্ধ বাউল চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯১৬ সালে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর রবীন্দ্রনাথের একটি ছবি আঁকেন। ছবিটিতে দেখা যায় বাউল রবীন্দ্রনাথ একতারা হাতে বিভোর হয়ে নাচছেন।
 
বাউল রবিকে নিয়ে আমরা বলি-
রবি তোমায় স্মরণ করি লোকসংগীতের গহীনে,
বিশ্বকবির গানে ও প্রাণে বাউল মনের ভিতর দোলা আনে,
তোমার কবিতা ও গানে বাউলা প্রভাব, জীবনের সুপ্ত বাসনা,
বাউল কয় আমি কোথা পাবো তারে, রবি কয় আমার সোনার বাংলা!

বাউল রবীন্দ্রনাথকে বরণ করে বলছি শেষ কথা-
“শুভ্রতার নির্মল ছোয়ায় রবি হলো বাউল,
বাউলের সুরেলা মোহনায় প্রভাবিত বিশ্বকবি বলে সর্বকুল।”

"নি:সঙ্গ কাক এবং আমি"

"নি:সঙ্গ কাক এবং আমি"
                                    - মোঃ রেজাউল আলম
মেঘনায় যেতে যেতে উড়ে এলো নি:সঙ্গ কাক,
একলা বসে ভাবছি আমি, দিবে কি সেই ডাক।
কুল কুল রবে ভেসে যায় বাউলা নদী,...
মন ভরিয়ে প্রাণ জুড়িয়ে কত সুন্দর ছবি।


নদী বাহিত এ দেশ,
প্রিয় বাংলাদেশ।
প্রাণের নদী-মেঘনা নদী,
রূপের নেইকো শেষ!
কাঁশ ফুলে সাজানো নদীর দুই পাড়,
শ্যামল চরে নদীর স্রোতে ভেসেছে অপার।

মেঘনায় যেতে যেতে উড়ে এলো নি:সঙ্গ কাক,
একলা বসে ভাবছি আমি, দিবে কি সেই ডাক।
কুল কুল রবে ভেসে যায় বাউলা নদী,
মন ভরিয়ে প্রাণ জুড়িয়ে কত সুন্দর ছবি।

একুলে তার বকের সারি,
ঐকুলে মোর মামার বাড়ি।
স্রোতের টানে সুরের টানে,
হৃদয়ে মোর ঢেউ আনে।
নদীর ঢেউয়ে ভাসছে জাহাজ-নৌকা,
সঙ্গে আরো ভাসে চিরচেনা কচুরিপানা।

মেঘনায় যেতে যেতে উড়ে এলো নি:সঙ্গ কাক,
একলা বসে ভাবছি আমি, দিবে কি সেই ডাক।
কুল কুল রবে ভেসে যায় বাউলা নদী,
মন ভরিয়ে প্রাণ জুড়িয়ে কত সুন্দর ছবি।

মেঘনার ঘোলা পানি মনকে করে বাউলা,
চুল উড়িয়ে কাক তাড়িয়ে হয়ে যাই আউলা।
নদীর বুকে ইলিশের বাড়ি,
মাছ ধরার নৌকা সারি সারি।
প্রাণের দেশে,
অবুজ বেসে,
নদীর বুকে সারস পাখি উঠল হেসে।

মেঘনায় যেতে যেতে উড়ে এলো নি:সঙ্গ কাক,
একলা বসে ভাবছি আমি, দিবে কি সেই ডাক।
কুল কুল রবে ভেসে যায় বাউলা নদী
মন ভরিয়ে প্রাণ জুড়িয়ে কত সুন্দর ছবি।
মেঘনা নদী, চাঁদপুর
বৃহস্পতিবার, ১৩.১০.২০১৬

মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬


বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ ওরফে শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। টেলিভিশন নাটক কিংবা চলচ্চিত্রে তার অভিনয় নৈপুণ্যতা আর নিজস্বতা দিয়ে দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নেন তিনি। কিন্তু ক্ষণজন্মা এই অভিনেতা  ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তার ভক্তকূলকে কাঁদিয়ে, এক দীর্ঘশ্বাস রেখে, না ফেরার দেশে চলে যান। আজ ৬ সেপ্টেম্বর তার প্রয়াণ দিবস।তিনি ছিলেন আমার আনন্দ ও অনুপ্রেরণা।তিনি আমাদের স্বপ্নের নায়ক।
তার স্মৃতির প্রতি জানাই শ্রদ্ধা ও নিরন্তর ভালোবাসা....
সালমান শাহকে উৎসর্গকৃত আমার এ ...কবিতা-

“সালমান শাহ”
                - মোঃ রেজাউল আলম (রেজা) (Rezaul Alam)
বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র সম,
সালমান শাহ এক নাম, যা আনন্দ ও অনুপ্রেরণায় মম।।
কি নাকট, কি সিনেমা, তোমার নিজস্ব প্রতিভায় ছিল পদচারণা,
কি ভঙ্গি, কি স্টাইল, তোমার দেখানো মহিমায়ই সবার প্রেরণা।
তুমি নেই,
তোমাকেই চাই।

তোমার চাহনি, তোমার ভঙ্গি, বুকে জাগায় ভালোবাসা,
তোমার পোষাক, তোমার ঢঙ্গি, হৃদয়ে জাগায় অনুপ্রেরণা।
বিদায় বন্ধু হে মহানায়ক
তোমার সৃষ্টি হয়েছে স্বার্থক।

বাংলাদেশের বিনোদন জগতের তুমি উজ্জ্বল মহানায়ক,
সালমান শাহ একটি নাম, যে সর্বক্ষেত্রেই ভাস্বর কি চলচ্চিত্র ও কি নাটক।
প্রেমের চরিত্র, প্রেমিকের চরিত্র, ভালোবাসার উপখ্যানে অনন্য দৃষ্টান্ত তুমি সালমান,
দু:খের চরিত্র, বিরহের চরিত্র, আবেগঘন মুঢ়তাই তোমার ফুটিয়ে তোলার ধরন।
তুমি নেই বাস্তবে আমার,
তুমি আছো অন্তরে অন্তর।

তোমার চাহনি, তোমার ভঙ্গি, বুকে জাগায় ভালোবাসা,
তোমার পোষাক, তোমার ঢঙ্গি, হৃদয়ে জাগায় অনুপ্রেরণা।
বিদায় বন্ধু হে মহানায়ক
তোমার সৃষ্টি হয়েছে স্বার্থক।।

অসময়ে তুমি চলে গেলে হৃদয়ে আঘাত দিয়ে
তোমার চলে যাওয়া মেনে নেয়নি জনতা স্বাভাবিক ভাবে
হু হু করা কান্নায় খুজি তোমায়
তুমি আছো অনবদ্য তোমার নাটক ও সিনেমায়
তোমায় ভুলে থাকা মোদের হবেনা,
কেয়ামত থেকে কেয়ামত পর্যন্ত তুমিই প্রেরণা।

তোমার চাহনি, তোমার ভঙ্গি, বুকে জাগায় ভালোবাসা,
তোমার পোষাক, তোমার ঢঙ্গি, হৃদয়ে জাগায় অনুপ্রেরণা।
বিদায় বন্ধু হে মহানায়ক
তোমার সৃষ্টি হয়েছে স্বার্থক।।

বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

বৃষ্টি ভেজা পথে দাড়িয়ে আছি তোমার প্রতীক্ষায়
                                 - মোঃ রেজাউল আলম (রেজা)


বৃষ্টি ভেজা পথে দাড়িয়ে আছি তোমার প্রতীক্ষায়,
ধীরে ধীরে আমার মনপ্রাণ সঁপেছি তোমায়।।
তোমার ভালোবাসার নিশ্বাসে নিজেকে হারিয়ে,
এমন বর্ষায় তুমি ছাড়া কিছুই যেন পড়ে না মনে।


পকেটে ইকনো কলম হাতে সিকো ফাইভ ঘড়ি নিয়ে বর্ষায় দাড়িয়ে আমি,
এমনই এক বর্ষায় মনোলোভায় তুমি আমি কাছাকাছি, তখনই তোমার হয়েছি।
মোর চির সাথী তোমার সেই দিনটা মনে পড়ে,
বৃষ্টির মত তুমি ভাসিয়েছ যে মোরে।

বৃষ্টি ভেজা পথে দাড়িয়ে আছি তোমার প্রতীক্ষায়,
ধীরে ধীরে আমার মনপ্রাণ সঁপেছি তোমায়।।

অপেক্ষার প্রহরে, বৃষ্টি ভেজা ক্ষণে, ইকনো কলমে তোমায় দেব কি চিঠি,
বৃষ্টি ভেজা পথে সিকো ফাইভে তাকিয়ে তাকিয়ে সময় গুনব নাকি।
সময়গুলো স্রোতের গতিতে যাচ্ছে চলে,
আমি রয়েছি তোমার পথ চেয়ে।

বৃষ্টি ভেজা পথে দাড়িয়ে আছি তোমার প্রতীক্ষায়,
ধীরে ধীরে আমার মনপ্রাণ সঁপেছি তোমায়।।

বৃষ্টির মতই তুমি প্রেমের বানে ভিজিয়েছ মোরে,
অদ্ভুত ভালোবাসার নি:শ্বাসে তুমি আমার উচ্ছ্বাস উড়িয়ে।
প্রবল বৃষ্টির ঝাপটায় দুরের রিকসার পর্দার ফাঁকে সুরবালা মনে হলো,
কাক ভেজা আমি চোখে বৃষ্টি পানি মুছে তাকিয়ে দেখলাম তোমার উজ্জ্বল আলো।

বৃষ্টি ভেজা পথে দাড়িয়ে আছি তোমার প্রতীক্ষায়,
ধীরে ধীরে আমার মনপ্রাণ সঁপেছি তোমায়।।

সুরবালা তোমায় দেখে অপেক্ষার ক্লান্তি ভুলে ভরে উঠল মন প্রশান্তিতে,
ভেজা কণ্ঠস্বর, ভেজা মন, তোমায় পেলাম সে প্রভাতে।
মনোলোভায় বসে মুখোমুখি অপলক চাহনি,
তোমার সাথে জানু ভ্রমণের দিনগুলো কিভাবে ভুলি।

বৃষ্টি ভেজা পথে দাড়িয়ে আছি তোমার প্রতীক্ষায়,
ধীরে ধীরে আমার মনপ্রাণ সঁপেছি তোমায়।।
--------------


ঢাকা, বাংলাদেশ
০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৬

আমিত নই কবি
        -মোঃ রেজাউল আলম (রেজা)
Rezaul Alam

আমিত নই কবি,
কবি সেত নজরুল-রবি।
ছন্দের সাথে আছি আমি,
মাতৃ ভাষায় ছন্দ মিলাই।
আমিত নই কবি,
কবিতার স্রষ্টা নজরুল-রবি।।

আমিত মিল করে লিখি ছন্দে,
আছি সবার মাঝে আনন্দে।
বিধাতার রয়েছে দয়া,
সবার আশীর্বাদের ছোঁয়া।
আমিত নই কবি,
কবি সেত নজরুল-রবি।
ছন্দের সাথে আছি আমি,
মাতৃ ভাষায় ছন্দ মিলাই।
আমিত নই কবি,
কবিতার স্রষ্টা নজরুল-রবি।।

গ্রুপগুরুর রয়েছে নির্দেশনা,
আমার ছন্দ ও প্রবন্ধের প্রেরণা।
লিখতে আমি পারি না যদি বলেন কবি,
বলছেন আবার রাগ কইরেন না লিখেন সবই।
আমিত নই কবি,
কবি সেত নজরুল-রবি।
ছন্দের সাথে আছি আমি,
মাতৃ ভাষায় ছন্দ মিলাই।
আমিত নই কবি,
কবিতার স্রষ্টা নজরুল-রবি।।

বলেন যদি কবি তাহলে পাবো শরম
উল্টো পথের যাত্রি আমি লজ্জ্বায় হই গরম।
সবার দোয়ায় শুরু করেছি নজরুল-রবিকে অনুসরন পর্ব,
কবিতায় তারাই লিখেছেন সকল মর্ম, নজরুল-রবি আমার গর্ব।
আমিত নই কবি,
কবি সেত নজরুল-রবি।
ছন্দের সাথে আছি আমি,
আমিত নই কবি,
কবিতার স্রষ্টা নজরুল-রবি।।
মাতৃ ভাষায় ছন্দ মিলাই।

ঢাকা, বাংলাদেশ
৩১ আগস্ট, ২০১৬ ।

সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৬

প্রকট ও প্রচ্ছন্ন
- মোঃ রেজাউল আলম (রেজা)
দুরন্তপনা মনে নিয়ে উড়ছি দেখ ঐ বাতাসে,
যেখানে তুমি কি আছো না নেই সকাসে-...
হিমেল হাওয়া,
ভিজা দুর্বাঘাসে পাওয়া,
একটু বসে ভাবি কিছু বলব তোমায় আড়ালে,
সেখানে তুমি কি আছো না নেই মোর অন্তরালে।

ভালোবাসার প্রকাশ তোমার অধরে পেয়েছিলাম,
নিশ্বাসে নিমগ্ন হয়ে রবীন্দ্রসংগীত গেয়েছিলাম-
জানালায় চাঁদ,
জ্যোৎস্না রাত,
মন্ত্রমুগ্ধ হৃদয়ে তোমাকে অনুভবে প্রকটভাবে পেলাম,
সেখানে তুমি কি ছিলে না নেই সবই প্রচ্ছন্নতার প্রলাম।
হৃদয়ে তোমাকে হারানোর ভয় তবুও মন নীরব রয়,
তোমার মন নিংড়ানো স্মৃতিতে মন্দির-মাজার হয়-
কাতর মন,
খোজে সারাক্ষণ,
প্রচ্ছন্নতার আবেশে কেন হারানোর বেদনা বুকে জাগে,
প্রকট হয়ে এসো কাছে, তুমি কি ছিলে না তুমি থাকবে।
স্থান- কর্মসংস্থান ব্যাংক ভবন, রাজউক এভিনিউ, ঢাকা-১০০০,
২৩ আগস্ট, ২০১৬।
 
আমার যাবার সময় হল দাও বিদায়
                           - কাজী নজরুল ইসলাম
আমার যাবার সময় হল দাও বিদায়
মোছ আঁখি দুয়ার খোল দাও বিদায়।।
ফোটে যে ফুল আঁধার রাতে...
ঝরে ধুলায় ভোর বেলাতে।।
আমায় তারা ডাকে সাথী
আয়রে আয়
সজল করুন আঁখি তোলো দাও বিদায়
অন্ধকারে এসেছিলাম
থাকতে আঁধার যাই চলে
ক্ষনেক ভালবেসেছিলে চিরকালের নাই হলে
হল চেনা হল দেখা
নয়ন জলে রইল লেখা
দর বিরহী ডাকে কেকা বরষায়
ফাগুন স্বপন ভোলো ভোলো দাও বিদায়।।


-------------------------জবাব--------------------------


বিদায় নাহি দেব প্রিয় নজরুল তোমায়
                                   - মোঃ রেজাউল আলম (রেজা) (Rezaul Alam)
বিদায় দিতে মন নাহি চায় বিদায় বেলায়,
ধুমকেতুর মত তোমার প্রকাশ, শুরু তোমার অগ্নিবীণায়।
নজরুলকে আমি বলেছি কবি কয় রবি বিশ্বকবি,
বিদায় নাহি দেব মোরা তুমিই যে মোদের শ্রেষ্ঠ জাতীয় কবি।

বিদায় নাহি দেব প্রিয় নজরুল তোমায়,
মনের চেতনায় রাখবো আগলায়।।

যাবার সময় হলেই গুরু যেতে নেই
তোমার র্কীর্তিতে রবে সকল দুয়ার খোলা এ ধরনীতেই
যে ফুল ফোটে দিনে রাতে
ঝরেণা অনেক ফুল দশ মাসেতে
তেমনি ফুল তুমি নজরুল
চলে গেলে মোরা হব ব্যাকুল।

বিদায় নাহি দেব নজরুল তোমায়,
মনের চেতনায় রাখবো আগলায়।।
-----------------------------
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম-এর প্রতি অতল শ্রদ্ধা...
@@নজরুল স্মরণে: নজরুল চেতনায়@@

কারার ঐ লৌহকপাট,
ভেঙ্গে ফেল, কর রে লোপাট,
রক্ত-জমাট
শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।
ওরে ও তরুণ ঈশান!
বাজা তোর প্রলয় বিষাণ!
ধ্বংস নিশান
উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি।
.....-কাজী নজরুল ইসলাম
 
জাতীরজনক বঙ্গবনধু শেখ মুজিবর রহমান প্রিয়কবি নজরুলকে
স্বপরিবারে দেশে ফিরিয়ে আনেন
প্রিয় বাংলাদেশের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতীরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-ই চিনতেন বাংলার দুই নক্ষত্রকে। তাইত তিনিই রবীন্দ্রনাথকে বসিয়েছিলেন হৃদয়ের মনিকোঠায় আর নজরুলকে চেতনায় এবং দিয়েছিলেন তাদের যোগ্য সম্মান। রবীন্দ্র রচণাকে করেছিলেন জাতীয় সংগীত এবং নজরুলের রচণাকে করেছিলেন রণসংগীত। পাশাপাশি কাজী নজরুল ইসলামকে বঙ্গবন্ধু করেছিলেন জাতীয় কবি ও ফিরিয়ে এনেছিলেন তাকে প্রিয় বাংলাদেশে।
কাজী নজরুল ইসলাম রয়েছেন মোদের চেতনায়। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে প্রেম-ভালোবাসা, সাম্য ও বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে–কাজেই "বিদ্রোহী কবি", তাঁর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে প্রতি বৎসর উদযাপিত হয়ে থাকে। কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam, মে ২৪, ১৮৯৯–আগস্ট ২৯, ১৯৭৬; জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬–ভাদ্র ১২, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) ছিলেন দুইবাংলার জনপ্রিয় বিদ্রোহী ও সাম্যের কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ – দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী ও স্যাম্যের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী ও সাম্যের কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই সমালোকদের সামনেই তাকে কবি হিসেবে স্বীকৃত দেন এবং বলেন- “নজরুলকে আমি কবি বলেছি। তার পান্ডুলিপির মর্মবাণী যারা না বুঝেই তার সম্পর্কে মন্তব্য করছেন, তাদেরকে নজরুলের লেখা মনোযোগে পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি।”
 
নজরুল আমার চেতনায় রয়েছেন। মহাপ্রয়ান দিবসে নজরুল স্মরণে অতল শ্রদ্ধা জানাই। নজরুল একটি নাম একটি ভালোবাসা একরাশ শ্রদ্ধা-
-> ভোরের কবি নজরুল: ভোরের পাখির ডাকে যেমন শিশুর তার মাকে ঘুম থেকে জেগে তোলার স্বাদ জাগে। তেমনি স্বাদ নজরুলের ডাকেই প্রস্ফুটিত হয়, তাই তিনিই ভোরের কবি। কবি বলেন-

“আমি হব সকাল বেলার পাখি
সবার আগে কুসুম-বাগে উঠব আমি ডাকি।
সূয্যিমামা জাগার আগে উঠব আমি জেগে,
‘হয়নি সকাল, ঘুমো এখন’- মা বলবেন রেগে।”
 
->শিশুদের প্রিয় কবি নজরুল: তাঁর শিশুতোষ কবিতা বাংলা কবিতায় এনেছে নান্দনিকতা খুকি ও কাঠবিড়ালী, লিচু-চোর, খাঁদু-দাদু ইত্যাদি তারই প্রমান। শিশুদের প্রিয় কবি খুকি ও কাঠবেড়ালিকে নিয়ে বলেন-

“কাঠবেড়ালি! কাঠবেড়ালি! পেয়ারা তুমি খাও?
গুড়-মুড়ি খাও? দুধ-ভাত খাও? বাতাবি-নেবু? লাউ?
বেড়াল-বাচ্চা? কুকুর-ছানা? তাও-
ডাইনি তুমি হোঁৎকা পেটুক,
খাও একা পাও যেথায় যেটুক!”
 
-> সাম্য, বিদ্রোহী ও দ্রোহের কবি নজরুল: কবি নজরুল তার কবিতায় সাম্যের গান গেয়েছেন, করেছেন বিদ্রোহ কিংবা দ্রোহের গান গেয়েছেন। লিখেছেন অগ্নিবীণা-১৯২২, সঞ্চিতা-১৯২৫, ফনীমনসা-১৯২৭, চক্রবাক-১৯২৯, সাতভাই চম্পা- ১৯৩৩, নির্ঝর- ১৯৩৯, নতুন চাঁদ- ১৯৩৯, মরুভাস্কর-সঞ্চয়ন-নজরুল ইসলাম: ইসলামী কবিতা-১৯৮২ ছাড়াও আরও অনেক কবিতা।
(১) বিদ্রোহী কবিতায় কবি খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া বলেন-
“বল বীর-
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারী' আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রীর!
বল বীর-
বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি'
চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ছাড়ি'
ভূলোক দ্যূলোক গোলোক ভেদিয়া
খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া,
উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!”
 
(২) নজরুলের সাম্যবাদের প্রধান ক্ষেত্র মানুষ। কে কুলি-মজুর আর কে সাহেব? সবাই তার দৃষ্টিতে সমান। 'সাম্যবাদী' কাব্যগ্রন্থে মোট ১১টি কবিতা স্থান পেয়েছে, যেমন- 'সাম্যবাদী', 'নারী', 'মানুষ', 'বারাঙ্গনা', 'রাজা-প্রজা', 'ঈশ্বর', 'পাপ', কুলি-মজুর', 'চোর-ডাকাত', 'সাম্য' ও 'কান্ডারি হুঁশিয়ার'। তিনি মন্দির-কাবার চেয়ে মানুষের হৃদয়কে বড় জ্ঞান করেছেন। কবি বলেছেন-'এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই।' তাই গেয়েছেন সাম্যের গান-
“গাহি সাম্যের গান-
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান
যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান।
গাহি সাম্যের গান!
কে তুমি?-পার্সী? জৈন? ইহুদী? সাঁওতাল, ভীল, গারো?
কনফুসিয়াস? চার্বাক-চেলা? বলে যাও, বল আরো!
বন্ধু যা খুশি হও”
(৩) দ্রোহের কবি যৌবনের কবি প্রাণের কবি নজরুল বলেছিলেন –
“মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দ্যম
মোরা ঝর্ণার মত চঞ্চল,
মোরা বিধাতার মত নির্ভয়
মোরা প্রকৃতির মত স্বচ্ছল।।
কিংবা - ২
গাজনের বাজনা বাজা!
কে মালিক? কে সে রাজা?
কে দেয় সাজা
মুক্ত স্বাধীন সত্যকে রে?
হা হা হা পায় যে হাসি,
ভগবান পরবে ফাঁসি!”
 
-> প্রেম ও ভলোবাসার কবি নজরুল: প্রেমের কবি ভালোবাসার কবি নজরুল হৃদয়ে প্রেম ও ভালোবাসার বান জাগিয়ে ছিলেন। প্রিয়ার খোপায় ফুল দিতে কে না চায় কিন্তু খোপায় তারার ফুল দিয়ে কন্ঠে বালিকা, জোছনার সাথে চন্দন দিয়ে প্রিয়ার গায় মাখাতে চাওয়া, আহা কি প্রেম কি ভালোবাসা গো। কবির ভাষায়-
“মোর প্রিয়া হবে এসো রানী দেব খোঁপায় তারার ফুল
কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির চৈতী চাঁদের দুল।।
কণ্ঠে তোমার পরাবো বালিকা
হংস –সারির দুলানো মালিকা
বিজলী জরীণ ফিতায় বাঁধিব মেঘ রঙ এলো চুল।।”
-> কবি নজরুলের নজরুলগীতি: নজরুলগীতি রবীন্দ্রসংগীতের জয়গানের পাশাপাশি একটি স্বতন্ত্র মাত্রা এনে দিয়েছিল। নজরুলের গাওয়া সংগীত মনকে বিদ্রোহী করে, প্রেমিক করে কিংবা দিনের শুরুতে ভোরের ডাক দেয়, হৃদয়ে ভালোবাসার ডাক দেয় ও চেতনা জাগায়। নজরুলগীতির মধ্যে অন্যতম হলো- বুলবুল-১৯২৮, সন্ধ্যা-১৯২৯, চোখের চাতক-১৯২৯, নজরুল গীতিকা-১৯৩০, নজরুল স্বরলিপি (স্বরলিপি)-১৯৩১, চন্দ্রবিন্দু-১৯৩১, সুরসাকী-১৯৩২, বনগীতি- ১৯৩১, জুলফিকার-১৯৩১, গুল বাগিচা-১৯৩৩, গীতি শতদল-১৯৩৪, সুর মুকুর-১৯৩৪, গানের মালা-১৯৩৪, স্বরলিপি-১৯৪৯, বুলবুল দ্বিতীয় ভাগ-১৯৫২, রাঙ্গা জবা (শ্যামা সংগীত)-১৯৬৬। নজরুল কহেন-
“আমার গানের মালা
আমি করব কারে দান।
মালার ফুলে জড়িয়ে আছে
করুণ অভিমান।
মালা করব কারে দান।।”

-> ছোট গল্পকার নজরুল: কবি নজরুলের বিখ্যাত ছোটগল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ব্যথার দান-১৯২২, রিক্তের বেদন-১৯২৫, শিউলি মালা- ১৯৩১ অন্যতম। কবি নজরুলের ছোটগল্পের শুদ্ধতা হৃদয়ে প্রেম ও ভালোবাসা জাগায়।
 
-> উপন্যাসিক নজরুল: নজরুল উপন্যাসিক হিসেবে বিখ্যাত ছিলেন। তার সৃষ্ট উপন্যাসগুলো পরবর্তীতে বিখ্যাত নাটক হিসেবেও সমাজে স্বীকৃতি ও জনপ্রিয়তা পায়। তার উল্লেখ্যযোগ্য উপন্যাস হলো: বাঁধন হারা-১৯২৭, মৃত্যুক্ষুধা-১৯৩০, কুহেলিকা-১৯৩১। পরবর্তীতে মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাস থেকে বিখ্যাত নাট্যকারগণ নাটক মঞ্চস্থ করেছিলেন এবং টিভিতে ধারাবাহিক নাটকও প্রচার করা হয়েছিল যা বিখ্যাত ও জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
 
-> নাট্যকার নজরুল: নাট্যকার কবি নজরুল ছিলেন অকুতভয় ও স্বপ্নিল। বাস্তবতাকে তিনি নাট্যরূপ দিয়েছিলেন বহুবার। তার বিখ্যাত নাটকগুলোর মধ্যে ঝিলিমিলি-১৯৩০, আলেয়া (গীতিনাট্য)-১৯৩১, পুতুলের বিয়ে (কিশোর নাটক)-১৯৩৩, মধুমালা (গীতিনাট্য)-১৯৬০, ঝড় (কিশোর কাব্য-নাটক)-১৯৬০, পিলে পটকা পুতুলের বিয়ে (কিশোর কাব্য-নাটক)-১৯৬৪ হলো অন্যতম।
 
-> প্রবন্ধ এবং নিবন্ধকার নজরুল: বিখ্যাত প্রবন্ধকার হিসেবে কবি নজরুল সমাধৃত ছিলেন। তার লিখিত প্রবন্ধ ও নিবন্ধগুলোর মধ্যে যুগবানী-১৯২৬, ঝিঙ্গে ফুল-১৯২৬, দুর্দিনের যাত্রী-১৯২৬, রুদ্র মঙ্গল-১৯২৭ কিংবা ধুমকেতু-১৯৬১, রাজবন্দীর জবানবন্দী-১৯২৩, দিওয়ানে হাফিজ(অনুবাদ)-১৯৩০, কাব্যে আমপারা (অনুবাদ) ১৯৩৩, মক্তব সাহিত্য (মক্তবের পাঠ্যবই-১৯৩৫, রুবাইয়াতে ওমর খৈয়াম (অনুবাদ-১৯৫৮,নজরুল রচনাবলী (ভলিউম ১-৪,বাংলা একাডেমী-১৯৯৩ হলো অন্যতম। ধুমকেতু তার বিখ্যাত প্রবন্ধ ছিল।
 
মর্মকথা: নজরুলের কাব্যগ্রন্থ বাংলা কবিতা ও বাংলা সাহিত্যে একটি নতুনত্ব সৃষ্টিতে সমর্থ হয়, এর মাধ্যমেই বাংলা কাব্যে ও বাংলা সাহিত্য জগতে পালাবদল ঘটে। উপন্যাসগুলোর মধ্যে মৃত্যুক্ষুধা এবং প্রবন্ধগুলোর মধ্যে ধুমকেতু কবির অনবদ্য সৃষ্টি। বিদ্রোহী কবিতার জন্য নজরুল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার রচিত আরেকটি বিখ্যাত কবিতা হচ্ছে কামাল পাশা। নজরুলের সবচেয়ে সাড়া জাগানো কবিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে: “প্রলয়োল্লাস, আগমনী, খেয়াপারের তরণী, শাত-ইল্-আরব, বিদ্রোহী, কামাল পাশা” ইত্যাদি। এগুলো বাংলা কবিতার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।
 
দুই নক্ষত্রের কথা: শেষ হইয়াও হইল না শেষ। শুরুতে দুই নক্ষত্রের কথা বলে ছিলেম। এবার শেষেও একটু না বললেই নয়। রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ’। বলেন, মানবিক ধর্মের কথা যা প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের উর্ধ্বে। একইভাবে নজরুল বলেন, ‘আমি আজও মানুষের প্রতি আস্থা হারাইনি। মানুষকে আমি শ্রদ্ধা করি, ভালবাসি। শ্রষ্ঠাকে আমি দেখিনি কিন্তু মানুষকে আমি দেখেছি। এই ধূলিমাখা, অসহায়, দুঃখী মানুষই একদিন বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করবে।’

নজরুল লিখেন,
‘গাহি সাম্যের গান/ মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।’
সেই চিরায়ত উপলব্ধি-‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।’
 
নজরুলের গুরুভক্তি: কাজী নজরুল ইসলাম গুরু বলে মান্য করতেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। একদা নজরুল নিজের কাব্য চর্চা থেকে অন্যত্র মনোনিবেশ করায় রবীন্দ্রনাথ কাজী নজরুলকে বলেছিলেন, ‘তুমি নাকি এখন তলোয়ার দিয়ে দাড়ি চাছো?’ নজরুল উত্তরে লিখেছিলেন, ‘গুরু কন আমি নাকি তলোয়ার দিয়ে দাড়ি চাছি...।’ রবীন্দ্রনাথের বয়স আশি বছর পূর্তি হয় ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে। তখন কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে লিখেন, ‘অশ্রুপুষ্পাঞ্জলি’। ১৯২০ থেকে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণের পূর্বকাল পর্যন্ত রবীন্দ্র-নজরুল সম্পর্ক ছিল পারস্পরিক স্নেহ ও শ্রদ্ধার।
তাদের সম্পর্ক ছিল শ্রদ্ধা ও স্নেহের গুরু-শিষ্য। ১৯২২ সালের ১১ আগষ্ট কলকাতা থেকে নজরুলের পরিচালনায় প্রকাশিত হয় অর্ধ-সাপ্তাহিক 'ধুমকেতু'। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ধুমকেতুর আর্শীবাণীতে নজরুলকে স্নেহধন্য "কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু” উল্লেখ করে লিখেন:
“আয় চলে আয়, রে ধুমকেতু
আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু
দুর্দিনের এই দুর্গশিরে
উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন”
১৯২৩ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার 'বসন্ত' গীতিনাট্য নজরুলকে উৎসর্গ করে দেশবাসীর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। রবীন্দ্রনাথের 'বসন্ত' উৎসর্গের পর, নজরুল আলীপুর সেন্ট্রাল জেলে বসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধাভরে "বিশ্বকবি সম্রাট শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্রী শ্রীচরণারবিন্দেষু" সম্মোধন করে রচনা করেন -'আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে' অর্থাৎ 'প্রলয়োল্লাস' কবিতা। কবি বলেন-
“আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে–
মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে।
নজরুল স্মরণে নজরুল আমার চেতনায়:
রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর এক বছর পরেই নজরুল চিরতরে অসুস্থ এবং ক্রমান্বয়ে সম্বিতহারা ও নির্বাক হয়ে যান। বাংলার দুই মহান কবির কণ্ঠ প্রায় একই সময়ে নীরব হয়ে যায়। কিন্তু আসলে কি নীরব হন নাকি রবীন্দ্রনাথ রয়েছেন হৃদয়ে ও নজরুল রয়েছেন চেতনায়।
রবীন্দ্রনাথের ভাষায় –
“তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম”

নজরুলের ভাষায়-
“আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো
তবু আমারে দেবোনা ভুলিতে।”
আমার ভাষায়-
নজরুল আমার চেতনায়
                              -মোঃ রেজাউল আলম (রেজা)
নজরুল আমার চেতনায় থাকবে স্বরবে,
তোমার কবিতা ও গানে আমার লীলা হবে।
যৌবনে তোমার প্রেমের কবিতা ব্যাকুল করে আমায়,
সবসময়ই তোমার গান আমার চেতনা জাগায়।।





 
রবীন্দ্রনাথ থাকবে আমার হৃদয় জুড়ে,
ধুমকেতুর মত আসবে নজরুল বারে বারে ফিরে।
মৃত্যু দিবসে নজরুলকে করছি স্বশ্রদ্ধ স্মরণ,
দুই বাংলা ১২ ভাদ্রে করছে অতল শ্রদ্ধায় কবিকে বরণ।
 
সাম্যের কবি, বিদ্রোহী কবি তুমি নজরুল,
জাতীয় কবি তোমাকে চিনতে করিনি ভুল।
মহাপ্রয়াণ বার্ষীকিতে তোমার বজ্রকন্ঠের বিদ্রোহে,
তুমি চিরতরে দুরে গিয়েও রয়েছ বাংলায় তোমার কীর্তিতে।
 
নজরুল আমার চেতনায় থাকবে স্বরবে,
তোমার কবিতা ও গানে আমার লীলা হবে।
যৌবনে তোমার প্রেমের কবিতা ব্যাকুল করে আমায়,
সবসময়ই তোমার গান আমার চেতনা জাগায়।।
 
-মোঃ রেজাউল আলম (ইরান) Rezaul Alam
জীবন যেখানে দুইরকম
                        -মোঃ রেজাউল আলম (রেজা)

জীবন যেখানে দুইরকম, সেখানে দুঃখ-কষ্ট কিংবা সুখ-দু:খের ঘটে প্রকাশ,
জীবনের প্রথমভাগ শিশু-কৈশোর এবং দ্বিতীয়ভাগ যৌবন-বার্ধক্যের আশ।
প্রস্ফুটিত চারা গাছ বীজ থেকে বের হয়ে বড় হয়,
যৌবনের দীপ্তিময়তায় ফল দেয় অথবা ফুল দেয়।
কিছুগাছ যৌবনেই পরে ঝড়ে,
কিছু যুগযুগে মাটি থাকে আঁকড়ে।
জীবন যেখানে দুইরকম ভাবে চমকায়
সেখানে জীবন প্রকাশ পায় - মলিনতায় কিংবা উজ্জ্বলতায়।।


শিশুকালের এই আমি, কৈশরেতে ছিলেম সেই আমি,
যৌবনেতে তোমায় নিয়ে ঘর-সংসার, বার্ধক্যে রইবে কি সেই সংসারের সেই তুমি।
শিশু-কৈশরকাল তোমাবিহীন ছিলেম শান্ত,
যৌবনে তোমায় পেয়ে হইলেম অশান্ত।
কিছুকাল উত্তাপহীন জীবন,
কিছুকাল কর্মময় জীবন,
জীবন যেখানে দুইরকম ভাবে চমকায়,
সেখানে জীবন প্রকাশ পায় - মলিনতায় কিংবা উজ্জ্বলতায়।।

তুমি ছাড়া জীবন ও তুমিসহ জীবন, ‍জীবনের দুইরকম সময় কাটল আনমনায়,
সখিগো তুমি হীনা অবেলা, সখিগো তোমার কাছে রয়েছি যে এবেলায়।
ঘরে ও বাইরে তোমাকে পেলে সুখের ভেলা মিলে,
যখন তুমি ছিলেনা মোর সনে সুখ কি ছিল ভেবেছি নির্জনে।
বাড়ির আঙ্গিনায় তোমার ভালোবাসার পদ চিহ্ন,
তোমাতে আমার নীল কষ্টগুলো করি বিদৃর্ণ।
জীবন যেখানে দুইরকম ভাবে চমকায়,
সেখানে জীবন প্রকাশ পায় - মলিনতায় কিংবা উজ্জ্বলতায়।।


স্থান: মতিঝিল, ঢাকা, ২৪ আগস্ট, ২০১৬।